৯৯৯-এ দিগুণ কল ছিল ভোটের দিন
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিন (৩০ ডিসেম্বর) জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ দিগুণ কল এসেছিল। এই সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারেরও বেশি। সাধারণত দিনে গড়ে ১৫ হাজার কল আসে। পুলিশি, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন গুজবের বিষয়ে জানতে সাধারণ মানুষ কল করেছিলেন। একইসঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অনিয়মের বিষয়েও কিছু কল এসেছিল বলে জানা গেছে।
জরুরি সেবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একটিভ কলগুলো রিসিভের পর যিনি যেসব সেবা চেয়েছেন বা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগের পুলিশ সুপার তবারক উল্লাহ বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে ‘৯৯৯’। সেবাটি শুরু হওয়ার পর থেকে কিছুদিন পর্যন্ত অনেক অপ্রয়োজনীয় কল আসতো। এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। ভুয়া এবং অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।’’
তবারক উল্লাহ বলেন, ‘আমরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই জরুরি সেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে আসছি। সাধারণত পুলিশের সহায়তা চেয়েই বেশিরভাগ ফোন আসে। এছাড়া দুর্ঘটনার খবর জানাতে ও নিরাপত্তা চেয়েও অনেক বেশি ফোন আসে।’
সূত্র জানায়, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ‘৯৯৯’ এর কল পরিসংখ্যান বলছে, ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ৩০ হাজার ৯০৬টি কল রিসিভ করেছে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ৯৯৮টি ‘একটিভ কল’ ছিল। এগুলোর মধ্যে ৭৭০টি পুলিশি সেবা, ফায়ার সার্ভিসের সেবার জন্য ১০৯টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়েছেন ১২২ জন। এর বাইরে অনুসন্ধান কল ছিল ১০ হাজার ৩৬১টি। যারা বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্য কল করেছিলেন। ১১ হাজার ৯৮১টি কল ‘ব্ল্যাঙ্ক’ কল ছিল। যারা কল করেছিলেন, কিন্তু কলদাতার কথা শোনা যায়নি।
জরুরি সেবা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের দিন মুগদা থেকে এক ব্যক্তি ‘৯৯৯’ এ কল করে জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক ব্যক্তি তাকে জানিয়েছেন বাংলাদেশে পুলিশের ওপর অ্যাটাক হতে পারে। এই বিষয়টি তারা জানেন কিনা? ওই ফোনের তথ্যাদি পুলিশ সদর দফতরকে অবহিত করেছিল ৯৯৯ কতৃপক্ষ। এছাড়া রাজধানীর উত্তরা থেকে আরেকজন ‘৯৯৯’ এ কল করে জানিয়েছিলেন, পিরোজপুরে এক প্রার্থীর পোস্টার পোড়ানো হচ্ছে। ৯৯৯ কতৃপক্ষ এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলেন বিষয়টি ভুয়া ছিল। পরে কলদাতাকে তা জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় জরুরি সেবা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত খুনের চেষ্টা প্রতিহত করা থেকে শুরু করে নারী পাচার রোধসহ প্রায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ১১ মাসে ৯৯৯-এ প্রায় ৭১ লাখ কল রিসিভ করা হয়েছে। সেবা দেওয়া হয়েছে ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৫ জনকে। একই সময়ে অপ্রয়োজনে কিংবা সেবা কার্যকর কিনা, তা জানতেও কল দিয়েছে প্রায় ৫৯ লাখ মানুষ। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে এবং ভুয়া কলের সংখ্যাও আস্তে আস্তে কমে আসছে।
কর্মকর্তারা জানান, মূলত তিন ধরনের জরুরি সেবা তারা দিয়ে থাকেন। এগুলো হলো- পুলিশি সেবা, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে প্রাণনাশের আশঙ্কা, ধর্ষণ সংক্রান্ত ঘটনা, গৃহকর্মী নির্যাতন, কাউকে আটকে রাখা, লিফটে আটকেপড়া, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা, দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, অ্যাম্বুলেন্স, পারিবারিক সমস্যা সমাধান, নিখোঁজ শিশু উদ্ধার, গাছ কাটা বন্ধ করা, শব্দদূষণ, ছিনতাইসহ নানা ধরনের সমস্যায় সাধারণ ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে তারা সহযোগিতা করেছেন। মূলত ৯৯৯ সেবা সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। এটি সম্পূর্ণ টোল ফ্রি অর্থাৎ বিনা পয়সায় কল করা যায়। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত কর্মীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্সসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জরুরি সেবার ৭৫ শতাংশ পুলিশি, ২০ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস এবং ৫ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পেতে কল আসে। কলের মধ্যে ইনকোয়ারি কল ১০ লাখ, ৯৮ হাজার ৯৭৩, ডিপার্টমেন্টাল কল ১০ হাজার ৬১২, চাইল্ড কল ১ লাখ ৩ হাজার ২৪১ এবং উইমেন কল ২৮ হাজার ৯৯৯টি। এর মধ্যে সাড়ে ১১ মাসে দুর্ঘটনা-সংশ্লিষ্ট কল এসেছে ৪ হাজার ৫৯৬, খুনের উদ্যোগ ২৯৪, শব্দদূষণের জন্য ১ হাজার ১৯৮, অগ্নিদুর্ঘটনা ৪ হাজার ৮৩৪, বাল্যবিয়ে ১ হাজার ১৮৯টিসহ অন্তত ৪৬টি বিষয়ে জরুরি সেবা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন