কান্ধলভী ও ইজতেমার বিভক্তি : যা ঘটছে
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নিয়ে তাবলিগের দুই গ্রুপ এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে। একটি পক্ষ আগামী ১১ জানুয়ারি এবং আরেকটি পক্ষ ১৮ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা শুরু করতে চায়। এ ব্যাপারে দুই পক্ষই সরকারের কাছে দেন দরবার শুরু করেছে। একটি পক্ষ গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে ১৮ জানুয়ারি ইজতেমা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। অন্য পক্ষ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন দিয়ে ১১ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা শুরুর অনুমতি চেয়েছে।
তাবলিগের নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বেশ কিছু বক্তব্য নিয়ে তাবলিগে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একটি পক্ষ তার বক্তব্যকে সঠিক মনে করলেও আরেকটি পক্ষ তার বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। এ নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে বাংলাদেশে তাবলিগ বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যা তাবলিগের মূল মারকাজ কাকরাইল থেকে দেশের মসজিদে মসজিদে ছড়িয়ে পড়ে। কাকরাইল মারকাজে বর্তমানে পালা করে দুই পক্ষ অবস্থান করছে। পাঁচ দিনের জোর নিয়ে গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীতে দুই গ্রুপের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে ইসমাইল মণ্ডল নামে একজন নিহত এবং আরো কয়েক শ’ আহত হন। গত বুধবার সামসুদ্দিন বেলাল নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে।
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ১৯৬৭ সালে শুরুর পর একবারে তিন দিনব্যাপী ইজতেমা হয়ে এলেও দিন দিন অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২০১১ সাল থেকে তিন দিন করে দুই ভাগে ছয় দিনে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বছরে ৩২টি জেলার মুসল্লিদের পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়। একটি ইজতেমা শেষ হওয়ার সময় পরবর্তী ইজতেমার সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত বছর ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে মতবিরোধ দেখা দেয়।
মাওলানা সাদ বাংলাদেশে এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে না পেরে ভারতে ফিরে যান। তবে তিনি কাকরাইল মসজিদে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে পরবর্তী ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন এ বছরের ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি। অন্য দিকে মাওলানা সাদের বিরোধীরা ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি এবং ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি। এভাবে দু’টি তারিখ নির্ধারণ করায় জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। দু’টি পক্ষই এখন তাদের নির্ধারিত দিনে ইজতেমা করতে অনড় রয়েছে। এ ব্যাপারে তারা নানারকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সুরাহা করতে সাদ বিরোধীরা গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠক করেন। তারা ১৮ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা শুরু করতে অনুমতি চান এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন। বৈঠকে বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী, মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মাহফুজুল হক, কাকরাইল মারকাজের মুরব্বি মাওলানা যুবায়ের আহমেদ, মাওলানা রবিউল হক প্রমুখ অংশ নেন।
এদিকে শুক্রবার মাওলানা সাদের অনুসারী কাকরাইল মারকাজের মুরব্বি ও আহলে শূরা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম আগামী ১১ জানুয়ারি ইজতেমা শুরু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন। এতে তিনি ইজতেমায় মাওলানা সাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং ৪ জানুয়ারি থেকে টঙ্গির ইজতেমা ময়দান তাবলিগের সাথীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে মাওলানা সাদবিরোধী শীর্ষ আলেম মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সাথে বৈঠকে ১৮ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা শুরুর ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে বিষয়টি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আমাদের জানাবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মাওলানা সাদ অনুসারীদের টার্গেট ইজতেমা বাধাগ্রস্ত করা। তাদের সাথে দেশের খুব কমসংখ্যক অনুসারী আছে।
মাওলানা সাদের অনুসারী মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, আমরা ১১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত একদফায় ইজতেমা করতে চাই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি। আমরা সংঘর্ষ সঙ্ঘাত চাই না। এজন্য তাদের ইজতেমার তারিখ যেন একটু পিছিয়ে দেয়া হয় সেটি আমরা কামনা করছি। তিনি বলেন, তাবলিগের দুই পক্ষের মতাদর্শ এখন ভিন্ন। এজন্য একসাথে ইজতেমা করার আর সুযোগ নেই। আমরা আলাদাভাবে ইজতেমা করতে চাই।