সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখা কতটা জরুরি?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : “মনে করেন আপনার বাড়ির সামনে একটা দেয়াল আছে। সেটার কারণে বন্যার পানি, দমকা বাতাস আপনার ঘরে ঢুকতে পারবে না। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের জন্য সুন্দরবন ঠিক সেই দেয়ালের কাজটাই করে।”

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ছোবল থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন যে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন পরিবেশবিদ ড. একিউএম মাহবুব।

এই বন না থাকলে উপকূলে বড় ধরণের তাণ্ডব হতে পারতো বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

শনিবার রাতে বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরা উপজেলায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এরপর এটি সুন্দরবনের খুলনা ও বাগেরহাট অংশের ওপর দিয়ে বয়ে যায়।

তবে প্রবল শক্তির এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সেভাবে পড়তে পারেনি বনের গাছপালায় এই ঝড় বাধা পাবার কারণে।

ভূখণ্ডে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার, কিন্তু সুন্দরবনের গাছপালার কারণে সেটির প্রভাব ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের মত অনুভূত হয় বলে বলছেন পরিবেশবিদ ড: মাহবুব।

সুন্দরবন যেভাবে রক্ষা করেছে
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বনাঞ্চলের ওপর দিয়ে দুই ধরণের ধাক্কা যায়। প্রথমে ক্ষিপ্র গতির বাতাস এরপর জলোচ্ছ্বাস।

সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতি নিয়ে খুলনা আর বাগেরহাটে লোকালয়ে পৌঁছায়।

বনে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার ছিল, সেটা বন পার হয়ে লোকালয়ে যেতে যেতে শক্তি হারিয়ে দমকা বাতাসে রূপ নেয় বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে, জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়।

এ কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তেমন থাকে না বলে বলছেন পরিবেশবিদরা।

সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কতোটা
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগেও ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন।

বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে।

যদিও সেই দুর্যোগে বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়েছিল বিস্তৃত বনাঞ্চল।

খুলনা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ. বশিরুল আল মামুন ধারণা করছেন এবারের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরণের কোন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।

কেননা সুন্দরবনে যে সময়টায় জোয়ার হয়, সে সময়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত করেনি। যার কারণে এবার পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে খুব একটা বেশি ছিল না।

তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে এবারে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি।

তবে ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল বেগে সুন্দরবনে আছড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছপালা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বন কর্মকর্তারা।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সুন্দরবনে জরিপ চালিয়ে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান মি. মামুন।

তবে এবারের ক্ষয়ক্ষতি সিডরের মতো না হওয়ায় বন খুব দ্রুত নিজ সক্ষমতায় পূর্বের অবস্থায় ফেরত যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সুন্দরবনকে রক্ষায় সুপারিশ
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সুন্দরবন সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান। সুন্দরবনকে রক্ষায় শিগগিরই ২২টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রণয়নের কথা জানান তিনি।

বনে যত্রতত্র গাছ কাটা ঠেকাতে ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বনের নিরাপত্তা বাড়ানো, সেইসঙ্গে বনায়নের জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর সুপারিশ করবেন তারা।

এছাড়া সবুজ উপকূল বেষ্টনী করার বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সুন্দরবন শুধু এবার না এর আগেও অসংখ্য ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। আমাদেরও মনে হয়েছে এই দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে রক্ষায় আমাদের সুন্দরবনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।”

সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয় সুন্দরবন অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় বেশিদূর এগোতে পারে না বলে চলতি বছরের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ের কোন প্রভাব বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পড়েনি।

কিন্তু একই ঘূর্ণিঝড় যদি বরিশালকেন্দ্রিক হতো তাহলে বাংলাদেশের জন্য বড় দুর্যোগ বয়ে আনত বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button