বন্ধ হচ্ছে দুর্নীতির নাটের গুরু ‘এপিএস’ নিয়োগ!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সরকারের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীরা একজন করে একান্ত সচিব এবং সহকারী একান্ত সচিব পেয়ে থাকেন। একান্ত সচিব সরকারি কর্মকর্তা হলে সহকারী একান্ত সচিব হন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পছন্দের বেসরকারি ব্যক্তি। সাধারণত রাজনৈতিক ভাবে ঘনিষ্ঠ কাউকেই মন্ত্রীরা এই পদে নিয়োগ দেন। তবে এবার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নিয়োগ বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। ক্যাডার সার্ভিস বা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এপিএস নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা তাদের পছন্দমতো একান্ত সচিব (পিএস) নিয়োগ দিতে পারবেন না। সরকারের তৈরি করা প্যানেল তালিকা থেকে পিএস নিয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সারসংক্ষেপ অনুমোদনের আগে কাউকে পিএস বা এপিএস নিয়োগ দেয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল একাধিক মন্ত্রী তাদের পছন্দসই কর্মকর্তাকে (সিনিয়র সহকারী সচিব/উপসচিব) একান্ত সচিব পদে নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) পাঠান।

এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য জনপ্রশাসন সচিবকে ফোন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের জানানো হয়, পিএস পদে নিয়োগ দিতে একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানোর কথা রয়েছে। এতে পিএস বা এপিএস পদে নিয়োগ দেয়া যায় এমন কর্মকর্তাদের নাম থাকবে।

ওই তালিকায় কারও নাম না থাকলে পিএস বা এপিএস করা যাবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতায় সরকার দেখেছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিপ্রায় থাকায় স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিবার থেকে পিএস বা এপিএস পদে অনেকেই নিয়োগ পান। ভবিষ্যতে পোস্টিং, পদোন্নতি বা নানা সুবিধার জন্যই এসব কর্মকর্তা পিএস বা এপিএস হয়ে থাকেন। এমন চিন্তা মাথায় রেখেই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, স্বচ্ছ ইমেজ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তা ছাড়া কাউকেই মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) বা সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পদে নিয়োগ করা যাবে না।

এজন্য বিভিন্ন ধরনের যাচাই বাছাই শেষে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় ক্যাডার সার্ভিসের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। এদিকে গত সোমবার শপথের পরই পিএস/এপিএস হতে আগ্রহী বিভিন্ন ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তারা নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে চেষ্টা তদবির শুরু করেন। মঙ্গলবার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই পিএস ও এপিএস পদে নিয়োগ দিতে বেশ কয়েকটি ডিও লেটার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে যায়। তবে আপাতত এসব ডিও লেটারের বিপরীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না।

মূলত: সহকারী একান্ত সচিব নিয়োগের উদ্দেশ্য মন্ত্রীদের রাজনৈতিক বিষয়াদিতে সহায়তা করা, মন্ত্রীদের এলাকার সমস্যার সমাধানে কাজকর্ম করা। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে,এপিএস পদটি হয়েছে মন্ত্রণালয়ের ভাইরাস। এরাই দুর্নীতির নাটের গুরু।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বন্ধের জন্য একাধিক সুপারিশ পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সুপারিশগুলো কিছু মন্তব্যসহ পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রাণালয়ে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশে, মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বন্ধে রাজনৈতিক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) বাতিলের সুপারিশ করেছে। দুদক বলেছে, মন্ত্রীদের বিভিন্ন অপবাদের প্রধান কারণ এইসব এপিএস। এপিএসদের ক্ষমতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের চেয়েও বেশি। দুদক বলেছে, মন্ত্রীদের শতকরা ৭০ ভাগ এপিএসই নানা দুর্নীতি এবং অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এরা মন্ত্রীদের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অনিয়ম করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button