জুয়েলারি দোকানের আড়ালে ডাকাত চক্রের হোতা: গাজীপুর থেকে আটক ছয় ডাকাত

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীসহ ‘আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের’ ছয় সদস্যকে আটক করেে র‌্যাব-১।

শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারওয়ার বিন কাশেম এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, টঙ্গীর আফতাব প্লাজায় পোদ্দার জুয়েলারি স্টোরের কর্ণধার প্রদীপ পোদ্দার। জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে গড়ে তোলেন ডাকাত চক্র। চক্রের সদস্যরা কেউ গ্রেফতার হলে তাদের আইনি সহায়তা দিতে নিয়োগ করেন উকিল।

আয় না থাকলে সদস্যদের বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তাও দিতেন তিনি। এছাড়া, অন্যান্য চক্রের ডাকাতি হওয়া মালামালও কম দামে কিনে রাখতেন প্রদীপ পোদ্দার।

বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) দিনগত রাতে ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি করা বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- শরীয়তপুরের পালং থানার প্রদীপ পোদ্দার (৪১), কাপাসিয়া উপজেলার টোকনযনপুর এলাকার মো. জাকির হোসেন (২৬), চাঁদপুরের হাইমচর থানার মজোমপুর এলাকার মো. রাসেল (২২), কালীগঞ্জ থানার উলুখোলার গলান মাইজপাড়া এলাকার মো. দুলাল হোসেন (৩০), তার স্ত্রী বাগেরহাটের চিতলমারী থানার বড়বাড়িয়ার মোছা. কোকিলা বেগম ওরফে প্রেরণা, মা হাজেরা বেগম ওরফে আজান।

এ সময় ধৃত আসামিদের নিকট হতে ডাকাতিকৃত ৬২.৭৫ গ্রাম (৫ ভরি ৬ আনা) স্বর্ণের অলংকার, ০৪ টি মোবাইল সেট, নগদ ১১ হাজার টাকা, স্বর্ণ যাচাই ক্যামিকেল ০২ বোতল, সিটি গোল্ডের চুড়ি- ১১ জোড়া, সিটি গোল্ডের কানের দুল ০৭ জোড়া, সিটি গোল্ডের গলার নেকলেছ ০২ টি ও ০১ টি কষ্টি পাথর উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি ঢাকা ও গাজীপুরে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছে এবং কয়েকটি জায়গায় ডাকাতি করছে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে ওই ৬ জনকে আটক করা হয়।

চক্রের মূলহোতা প্রদীপ পোদ্দারের টঙ্গীর আফতাব প্লাজায় একটি জুয়েলারির দোকান আছে। এর আড়ালে গড়ে তোলেন একটি ডাকাতি চক্র। যাদের কাজ না থাকলে আর্থিক সহায়তা দেন প্রদীপ। ডাকাতির সময় কেউ গ্রেফতার হয়ে গেলে তাদের আইনি সহায়তার জন্য উকিল নিয়োগসহ তাদের পরিবারের দায়িত্বও নিতেন তিনি।

একাধিক চক্রের ডাকাতি করা মালামালও স্বল্প মূল্যে কিনে রাখতেন প্রদীপ। এছাড়া, গত প্রায় ১০ বছর ধরে নিজে ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসাও চালিয়ে আসছিলেন।

র‌্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, আটক দুলাল পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি উত্তর বাড্ডা থেকে গার্মেন্টস পণ্য কিনে গাজীপুর ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। এই সুযোগে বিভিন্ন বাসায় ঢুকে বাসার সদস্যদের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন। যেসব বাসা বন্ধ থাকতো সেসব বাসার দরজা ভেঙে চক্রের অন্য সদস্যদের সহায়তায় ডাকাতি করতেন। কোনো বাসায় কম সদস্য থাকলে তাদের বেঁধে মালামাল লুট করে নিতেন।

কিছুদিন আগে টঙ্গীর একটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির সিসিটিভি ফুটেজে দুলালকে দেখা গেছে। তিনি ইতোপূর্বে একাধিকবার গ্রেফতার হন এবং প্রায় আড়াই বছর কারাভোগ করেন। এরপর জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ শুরু করেন।

রাসেল, জাকির এই চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা অসংখ্যবার চুরি-ডাকাতিতে অংশ নেন।

দুলালের স্ত্রী কোকিলা এবং দুলালের মা হাজেরাকেও আটক করা হয়েছে। কারণ তারা ডাকাতিকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি ডাকাতি করা মালামাল নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করে রাখতেন।

চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান সারোয়ার বিন কাশেম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button