যার হাতে তৈরি বাংলার প্রথম আধুনিক মানচিত্র

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শোনা যায়, ছোটবেলা থেকেই মানচিত্র অঙ্কনে জন্মগত নৈপুণ্যের অধিকারী ছিলেন। আর মাত্র ১২ বছর বয়সেই নিজের গ্রামের মানচিত্র এঁকে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ ভূগোলবিদ ও ঐতিহাসিক জেমস রেনেল—তিনিই প্রথমবারের মতো বাংলার গ্রহণযোগ্য একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন। জন্ম ১৭৪২ সালের ৩ ডিসেম্বর লন্ডনের ডেভন শহরের নিকটবর্তী চাডলি গ্রামে। শৈশবে মা-বাবা কিংবা পরিবারের সান্নিধ্যবঞ্চিত রেনেল মাত্র ১৪ বছর বয়সে সমুদ্রগামী জাহাজের মিডশিপম্যান হিসেবে যোগ দেন। ১৭৬০ সালে অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন হাইড পার্কারের অধীনে সমুদ্র জরিপের কাজ শেখা শুরু করেন। শোনা যায়, সে সময় তিনি ভারতের পন্ডিচেরি এসেছিলেন। এর তিন বছর পর নেপচুন নামে একটি জাহাজে করে ফের ভারত হয়ে আসেন বাংলাদেশে। তখন বাংলার গভর্নরের সেক্রেটারি ছিলেন রেনেলের বন্ধু। তার সুপারিশেই তিনি যোগ দেন বাংলার সার্ভেয়ার জেনারেল পদে। রেনেলের কর্মস্থল ছিল ঢাকা। ততদিনে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবস্থানও বেশ সুসংহত।

১৭৬৪ সালের শুরুর দিকে তিনি বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জরিপ সম্পন্ন করে মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। সমুদ্রগামী জাহাজের মিডশিপম্যান হিসেবে কাজ করে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জাহাজে কাজ করতে করতে নৌ-জরিপে হাত পাকানো ছিল তার। কলকাতার তত্কালীন গভর্নর হেনরি ভ্যানসিটার্ট ১৭৬৪ সালের ৬ মে জেমস রেনেলকে নদীয়া জেলার উত্তর সীমানাবর্তী জলঙ্গি নদীর মাথা থেকে পূর্ব দিকে ঢাকা পর্যন্ত গঙ্গা ও পদ্মার দক্ষিণ তীর তথা অববাহিকাবর্তী নদী-নালা জরিপের জন্য নিযুক্ত করেন। তার প্রতি নির্দেশ ছিল জলঙ্গি থেকে শুরু করে গঙ্গা (বর্তমানে পদ্মা) ও মেঘনার সঙ্গমস্থল পর্যন্ত দক্ষিণ তীরের গোটা এলাকা জরিপের। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাম দিকের তীর জরিপ করে তিনি ক্রমেই মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, আসাম পর্যন্ত কাজ করেন। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে জরিপের মূল যন্ত্র বলতে তার কাছে ছিল পেরামবুলেটর, কম্পাস আর রাতের আকাশে দিক নির্ণয়ে সাহায্যকারী তারা। ব্যস। সঙ্গে নিজের সহজাত নৈপুণ্য আর অভিজ্ঞতার সমাবেশ ঘটিয়ে কাগজে-কলমে রেনেল সাজাতে থাকেন এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির নকশা।

আরো একটি তথ্যানুসারে, রেনেল বাংলাদেশে কাজ শুরু করেন ১৭৬৪ সালের মার্চ নাগাদ। ২১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত জলঙ্গি থেকে শুরু করে দামোদর হয়ে মানচিত্র তৈরি করেন কুষ্টিয়ার উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত। ১ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত কুষ্টিয়ার বাকি অংশ থেকে শুরু করে গুবিন্দপুর হয়ে চরবাঘাটা পর্যন্ত ম্যাপ আঁকার কাজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তী পাঁচদিন করেন মুকুন্দপুর খালের সাত মাইল অংশ আঁকার কাজ। বৃষ্টির কারণে তাকে কাজ সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়। এরপর চরবাঘাটা থেকে আবার কাজ শুরু করে অরিংবেড়ী খালসহ বেতুরী পর্যন্ত মাপজোক করেন। ৮ অক্টোবর বেতুরীতে ক্যাম্প তৈরির পর বেতুরী থেকে মুলেপাড়া পর্যন্ত গঙ্গার মানচিত্র আঁকার কাজ শেষ করেন তিনি। মূলত, মুলেপাড়া থেকে মনসুরাবাদ পর্যন্ত ম্যাপ আঁকতে অক্টোবরের পুরোটাই লেগে যায় তার, যার মধ্যে ছিল কর্তাখালী ও হেসিয়াগঞ্জ খাল। আরো অদ্ভুত বিষয় হলো ওই মানচিত্রে বাঘের চলাচল পথও দেখাতে সমর্থ হন তিনি। নভেম্বরের ৫ তারিখ পাচুর থেকে কাজ শুরু করে গঙ্গানগর দ্বীপ, বুদারমন খাল থেকে হাবেলিগঞ্জ খাল হয়ে টিকিয়া দ্বীপ, বাখরগঞ্জ খাল হয়ে কিস্তিমারিয়া, পর্যন্ত নদীর গতিপথ আঁকার কাজটি শেষ করেন। এরপর কিস্তিমারিয়া থেকে সোনাপাড়া, চোরমদডাঙ্গা, মেহেন্দিগঞ্জ খাল হয়ে আসেকুর পর্যন্ত, সেখান থেকে কুমারখালী হয়ে মেঘনা নদীর ম্যাপ আঁকা হয়। পরে তিনি মেহেন্দিগঞ্জ খাল থেকে মেঘনার শাখা ইছামতী, ধলেশ্বরী ও ঢাকা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার মানচিত্র তৈরি করেন। তার আঁকা ম্যাপের সংখ্যা ছিল পাঁচটি। আজকের দিনে বিষয়টি যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ২৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে রেনেল, কিন্তু ততটা সহজভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। বাংলার ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ুর সঙ্গে একদিকে যেমন নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়েছে, তেমনি কাজে নেমে অনেক সময় এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

এমনই একটা ঘটনা হলো, বাহারবন্দ অঞ্চল জরিপের সময়কার। এখানে জরিপকালীন মালপত্র বহনের জন্য কুলির প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সাহায্যকারী কুলি জোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়েও কাউকে রাজি করানো যায় না। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উলিপুরের দেওয়ান রামশঙ্কর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন যে তার এলাকার বাসিন্দারা কেউ যেন রেনেলের কাজে সহযোগিতা না করে। রেগেমেগে রেনেল সাহেব রামশঙ্করকে কড়া ভাষায় একটা চিঠি লিখে কারণ দর্শানোর নির্দেশ পাঠান। রামশঙ্কর উত্তরে জানান যে কেউ ইচ্ছা করলে তার কুলিগিরি করতে পারে, তিনি কাউকে নিষেধ করেননি। রেনেল তখন রামশঙ্করকে আদেশ দেন, অবিলম্বে যেন তার কাছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কুলি প্রেরণ করা হয়, নইলে তাকে বিশেষভাবে শিক্ষা দেয়া হবে। রামশঙ্কর অবহেলা ভরে রেনেলের আদেশ উপেক্ষা করেন। অগত্যা রংপুরে চিঠি লিখে কুলি ও বাড়তি সেপাই আনান রেনেল। মনে মনে রামশঙ্করকে উচিত শিক্ষা দেবেন এ-ই প্রত্যয়। কিন্তু শেষমেশ দেখা যায় যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি কুলিরা পালিয়ে গেছে। এবার উলিপুরে উপস্থিত হয়ে ফের রামশঙ্করকে নোটিস দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। আগের মতোই রামশঙ্কর তার নোটিস উপেক্ষা করেন। এবার আর রেনেলকে কেউ দমাতে পারে না। সেপাই আর লোকবল নিয়ে উচিত শিক্ষা দিতে তিনি হাজির হন রামশঙ্করের বাড়িতে। কিন্তু গিয়ে দেখেন বিপদ আঁচ করতে পেরে রামশঙ্কর আগেই বাড়ি থেকে সরে পড়েছেন। কী আর করা। রামশঙ্করের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রশমিত করেন তিনি। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই কিন্তু রেনেল-রামশঙ্করের লড়াইয়ের অবসান হয় না। নিজের ভিটে-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার প্রতিশোধ নিতে ভোলেন না রামশঙ্কর। পাইক বরকন্দাজ আর গ্রামবাসীকে উসকে দেন রেনেলের বিরুদ্ধে। রামশঙ্করের এক দঙ্গল লোক ধাওয়া করে রেনেলের দলকে। প্রাণ বাঁচাতে গভীর জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় রেনেল ও তার দলকে। এভাবে কয়েক দিন জঙ্গলে অবরুদ্ধ হয়েও থাকতে হয় তাদের। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে কোনোভাবে লুকিয়ে রংপুরে চলে আসেন তিনি।

রেনেল বাংলায় এক দশকেরও বেশি অবস্থান করেন। বাংলার আবহাওয়া, উষ্ণতা, আর্দ্রতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বাঘ, কুমির, সাপ, মশার উপদ্রব মোকাবেলা করতে গিয়ে কাজটি করার সময় বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। কেবল রামশঙ্কর কিংবা অন্যদের অসহোযোগিতাই নয়, পাশাপাশি ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহীদের আক্রমণের ভয়ে বেশ শঙ্কাগ্রস্ত থাকতে হয়েছে তাকে। এর মধ্যে একদিন কুচবিহার অঞ্চলে কাজের সময় ফকির বিদ্রোহীদের দ্বারা কেবল আক্রান্তই গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। সেই আঘাতের ক্ষত থেকে তিনি কখনই সম্পূর্ণ সেরে ওঠেননি। বলা হয় এ আঘাতের কারণেই অল্প বসয়ে তাকে বাধ্য হয়ে অবসর গ্রহণে যেতে হয়েছে।

১৭৬৪ সালে রেনেলকে যখন জরিপকাজের দায়িত্ব দেয়া হয় তখন তার বয়স বড়জোর ২২ বছর। তাছাড়া আগেই বলেছি, সে সময়ে জরিপের জন্য বিজ্ঞানসম্মত যন্ত্রপাতি তেমন একটা আবিষ্কৃত হয়নি। তবু নিজের নিষ্ঠা আর নৈপুণ্য কাজে লাগিয়ে রেনেল বাংলার মোটামুটি নিখুঁত একটি মানচিত্র অঙ্কনে সমর্থ হন। প্রথমে তিনি ছোট পরিসরে বিভিন্ন অঞ্চলের ম্যাপ প্রস্তুত করেন। তিনি এটি করেছিলেন কাজের সুবিধার জন্য। পরে বাংলা তথা ভারত থেকে একেবারে দেশে ফিরে যাওয়ার পর সেসব ম্যাপ একত্রে সন্নিবেশ করে ১৭৭৯ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘অ্যাটলাস অব বেঙ্গল’। অ্যাটলাস অব বেঙ্গল হলেও এর পরিধি কিন্তু বাংলা বিহার ওড়িশা ছাড়িয়ে উত্তর ভারতের প্রায় সমগ্র অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পরিশিষ্টাংশে তিনি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের খুঁটিনাটি বিস্তারিত বিবরণও দিয়েছেন।

তাছাড়া রেনেলকে জরিপের বিস্তারিত বর্ণনা করে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করতে হতো। এ বিষয়ে তার ওপর সরকারি নির্দেশও জারি ছিল। তার প্রেরিত প্রতিবেদন নিয়ে কলকাতায এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল ১৯১০ সালে ‘জার্নালস অব জেমস রেনেল’ নামে একটি বই প্রকাশ করে। তবে বইটি যখন প্রকাশ হয় ততদিনে রেনেলের দেখা বাংলা ও ভারতের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তার পরও এর অপরিসীম ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বইটি প্রকাশ করা হয়। এতে তত্কালীন বাংলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সড়কপথ, নদী ও নদীপথের বিবরণ উঠে এসেছে। পরবর্তী সময়ে আধুনিক ও মানসম্পন্ন মানচিত্রের অভ্যুদয়ের আগ পর্যন্ত অনেক দিন ধরে রেনেলের মানচিত্রটি ছিল ব্রিটিশদের প্রধানতম নির্দেশিকা। বাংলার আধুনিক ভৌগোলিক মানচিত্রের সঙ্গে রেনেলের ম্যাপটি মিলিয়ে দেখলে নদীমাতৃক বাংলার বিবর্তনের ব্যাপারটি পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে।

মানচিত্রসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া সমসাময়িক রাজনীতি, সমাজিক বা অর্থনৈতিক দিকগুলো রেনেল তার লেখায় উল্লেখ করেননি। তবে কিছু বিষয় চলে এসেছে। যেমন তিনি লিখেছেন, বাংলার জলপথে নৌকা চালানোর জন্য সম্ভবত ৩০ হাজার মাঝিমাল্লার স্থায়ীভাবে চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। এ দেশের এক কোটি অধিবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় লবণ ও অন্যান্য দ্রব্যাদির বেশির ভাগ জলপথেই পরিবাহিত হয়। এর মধ্যে আন্তঃদেশীয় আমাদানি-রফতানি যেমন ছিল, তেমনি ছিল দেশীয় কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যাদি। ১৭৬৩ সালে সংঘটিত এক প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসের কথা তিনি দুঃখজনক হিসেবেই উল্লেখ করেন তার লেখায়। গঙ্গার জলপ্রবাহ সম্পর্কে যেমন বলেছেন, শুকনো মৌসুমে ৮০ হাজার কিউসেক ও বর্ষায় চার-পাঁচ লাখ কিউসেক পানি গঙ্গা দিয়ে প্রবাহিত হয়। আরো উল্লেখ করেছেন এ অঞ্চল থেকে পদ্মার পূর্ব পাশে মনুষ্য নির্মিত একটি বড় বাঁধের কথা। কিংবা লিখেছেন কুষ্টিয়া থেকে কলকাতা স্থলপথে ছয়দিনের পথ, কুষ্টিয়া থেকে খুলনা নৌকায় ১০ দিনের পথ ইত্যাদি। কুমার নদীপথে জরিপের সময় তিনি নদীতে প্রচুর কুমির আর কচ্ছপ দেখেছেন, যেমনটা সুন্দরবনের কাছাকাছি অন্যান্য অঞ্চলেও দেখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলার অনেক জায়গায়, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন কিংবা পুরনো প্যাগোডার কথা বলেছেন। ধারণা করা হয়, বাংলার মন্দিরগুলোকেই তিনি প্যাগোডা হিসেবে মনে করেছেন। এখানের সব অঞ্চলেই প্রচুর ধানক্ষেত, পানের বরজ ও সুপারি গাছের কথা লিখেছেন। বলেছেন রংপুর অঞ্চলে প্রচুর তামাক চাষের কথাও। নদীপথে চলাচলের জন্য তিনি যে বাহনটি সচরাচর ব্যবহার করতেন তা ছিল বাংলাদেশের অতিপরিচিত বজরা নৌকা। রেনেল অবশ্য এর নাম বলেছেন Budgarow ।

কাজের সফলতার পুরস্কারস্বরূপ রেনেলকে সমগ্র ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ১৭৬৪ থেকে ১৭৭৭ সাল—এই ১৩ বছর তিনি বঙ্গদেশে ব্রিটিশ জরিপকাজে নিযুক্ত ছিলেন। তার কাজের আগে বিক্ষিপ্তভাবে বাংলা বা ভারতের কিছু মানচিত্র অঙ্কিত হলেও রেনেলের কাজের কাছে সেগুলো টেকেনি। তিনি মোট ১৬টি ম্যাপ তৈরি করেছিলেন ক্ষেত্র সমীক্ষাকে ভিত্তি করে। এর মধ্যে তিনটি হারিয়ে গেলেও বাকিগুলো লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিসে আছে বলে তথ্য মেলে। রেনেলের মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো এতে যেসব নদী-খাল, রাস্তা বা স্থান নাম বর্ণিত আছে তা থেকে তত্কালীন অবস্থার একটা চিত্র পাওয়া যায়। তাছাড়া পূর্বে সিলেট থেকে পশ্চিমে বস্কার, উত্তরে হিমালয় থেকে শুরু করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এ বিস্তৃত এলাকার চিত্রকর ছিলেন রেনেল। শোনা যায়, বাংলা-বিহারের একটি ‘টপোগ্রাফিক্যাল’ মানচিত্র ওয়ারেন হেস্টিংসকে ও পালাশীর যুদ্ধের নকশা এঁকে লর্ড ক্লাইভকে উৎসর্গ করেন তিনি।

১৭৭৭ সালে মেজর অব বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার পদে উন্নীত হয়ে চাকরি থেকে অবসর নেন। জীবনের বাকি দিনগুলো তিনি লন্ডনেই কাটিয়েছেন সমুদ্রস্রোত বিষয়ে গবেষণা করে। ব্রিটিশরা তাকে কেবল সমুদ্রবিদ্যার পিতা হিসেবেই সম্মোধন করেনি, বিলাতের সেরা ভূগোলবিশারদ হিসেবেও গণ্য করেছে। জেমস রেনেলের মৃত্যু হয় ১৮৩০ সালের ২৯ মার্চ।

পরিশেষে, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থের প্রয়োজনে করা মানচিত্র ঘটনাক্রমে বাংলার প্রথম নির্ভরযোগ্য কোনো ভূচিত্র। তবে রেনেলের হাতে তৈরি বাংলার ভূ-প্রকৃতির নকশাটি নেহাত একটি মানচিত্র নয়, প্রাচীন দলিলও বটে।

 

লেখক: রুহিনা ফেরদৌস, সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button