চাঁদের মালিকানা কার?
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : চাঁদের মাটিতে বহু মূল্যবান পদার্থের সন্ধানে খনন করতে চায় উন্নত বিশ্বের বেশ কিছু কোম্পানি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর ভূভাগের মতো চাঁদেও কি মানুষের মালিকানা চলবে?
নেইল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে পা দেওয়ার পর ৫০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। চাঁদে পা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা একজন মানুষের জন্য সামান্য হলেও মানবজাতির জন্য বিশাল পদক্ষেপ।’ আর তারই সহকর্মী অলড্রিন ঈগল লুনার মডিউল থেকে চাঁদকে দেখে বলেছিলেন, ‘চমৎকার জনশূন্যতা’।
চলতি মাসের শুরুতে চীনের চ্যাং’ই-ফোর চাঁদের উল্টো পিঠে অবতরণ করে। চাঁদের মাটিতে মহাকাশযানটির বিজ্ঞানীরা একটি তুলার বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটাতে সমর্থ হন। যদিও পরে চারাগাছটি মারা যায়। জাপানের সংস্থা আইস্পেস পৃথিবী থেকে চাঁদে একটি পরিবহন প্ল্যাটফরম তৈরি করার পরিকল্পনা করছে এবং সেখানে পানির অনুসন্ধান করতে চাইছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মহাকাশে পৃথিবীই কি মানুষের জন্য একমাত্র বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক এবং সম্পদ আহরণের ক্ষেত্র হিসেবে থাকবে নাকি এর বাইরেও মানুষ নিজের কলোনি স্থাপন করবে। শীতল যুদ্ধ চলাকালীন মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু থেকেই এই মালিকানা সংক্রান্ত ইস্যুটি সামনে চলে আসে। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার আউটার স্পেস চুক্তির আওতায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মহাকাশে অভিযান চালাতে শুরু করে। ওই চুক্তিতে বলা হয়, ‘মহাশূন্য, চাঁদ এবং অন্য মহাজাগতিক বস্তুর ওপর সার্বভৌমত্ব, দখলদারিত্ব চালানো যাবে না।’
মহাকাশবিষয়ক কোম্পানি অ্যালডেন অ্যাডভাইজার্সের প্রধান জোয়ান হুইলার এই চুক্তিকে ‘মহাকাশের ম্যাগনা কার্টা’ নামে অভিহিত করেন। এই চুক্তির আওতায় চাঁদের মাটিতে আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিনের গেঁথে দেওয়া মার্কিন পতাকা কোনো অর্থ বহন করে না। যদিও ওই পতাকা স্থাপনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে সর্বোচ্চ সুবিধা নিচ্ছে।
১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের অধীনে চাঁদ চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে বলা হয়, মহাকাশীয় সব বিষয় শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হবে এবং কেউ মহাকাশে কোনো স্টেশন নির্মাণ করতে হলে জাতিসংঘকে অবহিত করতে হবে। আরও বলা হয়, চাঁদ এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদ মানবজাতির ঐতিহ্য এবং চাঁদের সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তৈরি করা হবে। কিন্তু সমস্যা হলো ওই চুক্তিটি মাত্র ১১টি দেশকে নিয়ে করা হয়। ফ্রান্স এবং ভারত সবশেষে অন্তর্ভুক্ত হয়। মহাকাশে সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া।
জার্নাল অব স্পেস ল’র সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক জোয়ান ইরিনের মতে, জাতিসংঘের অধীনে করা চাঁদ চুক্তি কোনোভাবেই এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে কোনো দেশ চাঁদের মাটিতে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে না। এই চুক্তিটি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং জনমতের এক অদ্ভুত মিশেল।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ কমপিটিটিভনেস অ্যাক্ট পাস করে। এই আইনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ মহাকাশের সম্পদ ভোগ করতে পারবে। এর মধ্যে চাঁদ না থাকলেও, যেকোনো মুহূর্তে তা যুক্ত করা যায়। ২০১৭ সালে লুক্সেমবার্গ তাদের নিজেদের আইন পাস করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের মতো সমান অংশীদারিত্ব দেওয়া হয় এর নাগরিকদের।
সূত্র: বিবিসি