কালীগঞ্জে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সন্ধান: র‌্যাবের জালে গ্রেপ্তার দুই যুবক

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে ২০১৮ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে ভূয়া প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র।একই কায়দায় এবারের (২০২০ সালের) এসএসসি পরীক্ষায়ও ভূয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রটি বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল চক্রটি।

ঠিক তখনই বিষয়টি নজরে আসে র‍্যাবের সাইবার মনিটরিং ইউনিটের এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে দীপ্ত দাস নামে এক যুবকের বাড়ীতে ভূয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের কতিপয় সদস্য অবস্থান করছে।

এরপর র‌্যাব-১ এর স্পেশালাইজড কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল রোববার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে কালীগঞ্জের জামালপুর ইউনিয়নের বাশাইর গ্রামের ওই বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো জামালপুর ইউনিয়নের নগপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মাহবুব আলম (২৪) এবং বাসাইর গ্রামের মৃত জীবন দাশের ছেলে দীপ্ত দাশকে (২৩)।

সোমবার র‌্যাব-১ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের সংগ্রহ থেকে ‘আকাশ খান’ নামে একটি ফেসবুক আইডি, বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে ম্যাসেজ আদান প্রদানের ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদানের স্কিনসট নেওয়া প্রিন্ট কপি, ফেসবুক ব্যবহৃত ৫ টি মোবাইল এবং নগদ ১২ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মাহবুব আলম ও দীপ্ত দাশ নরসিংদীর পলাশ শিল্পাঞ্চল সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। এছাড়াও তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ায়। প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে ২০১৮ সালে ফেসবুক আইডির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে। তারা ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রলোভন দেখালে অনেক সুযোগ সন্ধানী শিক্ষার্থী তাদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটস্অ্যাপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের কাছে অবৈধভাবে ভূয়া প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে সুযোগ সন্ধানী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার পরে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো থেকে ডিলেট করে দিত।

র‌্যাব জানায় গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় , ফেসবুকে তাদের দেয়া পোষ্ট দেখে অনেক সুযোগ সন্ধানী শিক্ষার্থীরা প্রলোভনে পড়ে প্রশ্ন পাওয়ার আশায় বিকাশের মাধ্যমে তাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠাতো। পরে ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো এর বিভিন্ন লিংক/গ্রুপ থেকে প্রাপ্ত প্রশ্নপত্র সরবরাহ করত। আবার কখনো পূর্বের বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কাটছাট করে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে নিজেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করে সরবরাহ করত। এভাবে পাবলিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী পরীক্ষা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে তারা বিভিন্ন শিক্ষার্থী/চাকুরীজীবিদের কাছ থেকে বিকাশ ও বিভিন্ন পন্থায় মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাইয়ের ভিত্তিতে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও র‌্যাব জানায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button