গাজীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নৃশংসতায় মারা গেলেন এক অটোচালক!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নৃশংস নির্যাতনের শিকার অটোরিকশাচালক সাইদুল ইসলাম (৩০) তিন মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মানলেন। শনিবার দুপুরে তিনি নিজ বাসায় মারা যান। গত বছরের ২০ অক্টোবর চোর সন্দেহে প্লাস দিয়ে হাতের নখ উঠিয়ে এবং পিটিয়ে অটোচালক সাইদুল ইসলামকে গুরুতর জখম করেছিল গাজীপুর সিটির ৩০নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আদিল হোসেন।

সাইদুল ইসলাম বাঙ্গালগাছ এলাকার আবদুস সাত্তারের বড় ছেলে। তার দুই সন্তান- অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র জসিম (১৪) ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী শান্তা (১২)। সাইদুল ওই এলাকার আজিজ খানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

নিহত সাইদুল ইসলামের বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, আমার ছেলেকে নৃশংস অত্যাচার করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আদিল হোসেন। তার সঙ্গে ছিল বালুচাকুলি ও নিলেরপাড়া এলাকার রশিদের ছেলে মফিজুল, আবুল হোসেনের ছেলে আলহাজ হোসেন ও মতিন সামসুল মোল্লার ছেলে মো. শামীম।

আবদুস সাত্তার বলেন, গত বছরের ২০ অক্টোবর ভোর ৪টায় ৩০নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আদিল হোসেন চোর সন্দেহে সাইদুলকে বাসা থেকে উঠিয়ে বালুচাকুলি এলাকায় নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে চোখ বেঁধে প্লাস দিয়ে হাতের নখ উঠিয়ে ফেলে এবং লাঠি দিয়ে পুরো শরীর নৃশংসভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে ভাড়া বাড়ির মালিক আজিজ খানের ছেলে মইজদ্দিন খান ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পাঁচদিন পর হাসপাতাল থেকে ফিরে এলেও আর সুস্থ হয়নি সাইদুল। শয্যাশায়ী অবস্থায় তিন মাস ধুঁকে অবশেষে শনিবার দুপুরে মারা যায় আমার ছেলে।

সাইদুল ইসলামের বাবা আবদুস সাত্তার আরও বলেন, আদিল হোসেনের ভয়ে আমরা থানায় না গিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেনের সালিশ বোর্ডে লিখিতভাবে স্বেছাসেবক লীগ সভাপতি আদিল হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে লিখিত নালিশ করি।

এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার পর অভিযুক্ত আদিল হোসেনকে তিনবার নোটিশ করার পরও সে সালিশে হাজির হয়নি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। সাইদুল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

তবে নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আদিল হোসেন বলেন, আমি তাকে (সাইদুল) হালকা-পাতলা মেরেছি। আর আমার পিটুনিতে মারা গেছে কিনা তা জানা যাবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রো সদর থানার ওসি সমীর চন্দ সূত্রধর বলেন, নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনাটি যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিকে এলাকাবাসী জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আদিল হোসেন তিন বছর একইভাবে নিজের বাবাকেও মারধর ও ছুরিকাঘাত করেছিল। কয়েক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button