জনতা ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির নেপথ্যে জাজ মাল্টিমিডিয়া

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : জনতা ব্যাংকে ক্রিসেন্টের আর্থিক কেলেঙ্কারির বড় অংশই হয়েছে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের মাধ্যমে। এ প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যবহার করে জনতা ব্যাংক থেকে একাই ১ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন মো. আব্দুল আজিজ। রিমেক্স ফুটওয়্যার নামের চামড়া খাতের এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। বাংলা চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ারও কর্ণধার আব্দুল আজিজ। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই উত্থান জনতা ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির সূচনা পর্ব থেকে।

বৃহস্পতিবার অর্থ আদায়ে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের বিরুদ্ধে ঢাকার ১ম অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে জনতা ব্যাংক। মামলার প্রধান বিবাদী করা হয়েছে রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজকে। তার স্ত্রী লিটুল জাহান মীরাও রয়েছেন বিবাদীর তালিকায়।

জনতা ব্যাংকে রিমেক্স ফুটওয়্যারের দায়-দেনার হিসাবে দেখা যায়, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের কাছে রফতানি বিল ক্রয় (এফডিবিপি) বাবদ জনতা ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৫৫৩ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার ৫৩৯ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি প্যাকিং ক্রেডিট (পিসি) বাবদ ১৮০ কোটি ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৯৭ টাকা ঋণ নিয়েছে। সাধারণত রফতানি পণ্য শিপমেন্টের জন্য এ ধরনের ঋণ দেয়া হয়। রিমেক্স ফুটওয়্যার রফতানির জন্য অগ্রিম ক্যাশ সাবসিডি হিসেবে নিয়েছে ১৫ কোটি ৮২ লাখ ৪৩৯ হাজার ১৬৯ টাকা। রিমেক্স ফুটওয়্যারের অন্য দায়গুলো হলো— সিসি হাইপো ১০০ কোটি ৬৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৫৪, সিসি প্লেজ ১১৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬২ হাজার ৩৩২, আইএফডিবিসি ৫৪ কোটি ৫৯ লাখ ৯৮ হাজার এবং এলসি বাবদ ৯৫ লাখ টাকা। এছাড়া সাধারণ ঋণ রয়েছে ১১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের কাছে জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে, ১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার ১২৬ টাকা।

দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবির্ভাব ২০১১ সালে। এর পর থেকে একের পর এক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে থাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। সিনেমাপাড়ায় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ। নিজের সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা কথা প্রচার করেন তিনি। দেশের অন্যতম বৃহৎ ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আব্দুল আজিজের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে।

জনতা ব্যাংকের তথ্য বলছে, জাজ মাল্টিমিডিয়ার উত্থান পর্বে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ বেরিয়েছে জনতা ব্যাংক থেকে। শুরুতে আব্দুল আজিজের বড় ভাই এমএ কাদেরের ক্রিসেন্ট গ্রুপের নামে ব্যাংক থেকে বের করা হয়েছিল ঋণ। কিন্তু ২০১৩ সালে এসে রিমেক্স ফুটওয়্যারের নামে ঋণ আবেদন করেন আব্দুল আজিজ। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানেই ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। এ টাকার একটি অংশ বিনিয়োগ হয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিনেমায়। বাকি অংশ পাচার হয়েছে দেশের বাইরে। এ নিয়ে বিদায়ী বছরের ২৭ আগস্ট ‘জনতা ব্যাংকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি: পর্দার আড়ালে জাজ মাল্টিমিডিয়া’ শিরোনামে অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনে আব্দুল আজিজের ব্যাংক কেলেঙ্কারির বিষয়টি উঠে আসে।

এরই মধ্যে আব্দুল আজিজ ও তার ভাই এমএ কাদেরের বিরুদ্ধে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকাই পাচার হয়েছে রিমেক্স ফুটওয়্যারের মাধ্যমে। এ নিয়ে মামলাও করেছে রাজস্ব আদায়ের সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে স্থান হয়েছে এমএ কাদেরের। কিন্তু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছেন আব্দুল আজিজ।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বৃহস্পতিবার ফোন করা হয় আব্দুল আজিজের দুটি সেলফোন নম্বরে। একটি রিসিভ না করলেও অন্য নম্বরে রিসিভ করেন তিনি। কিন্তু প্রতিবেদক পরিচয় দেয়ার পর ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দেন।

 

সূত্র: বণিক বার্তা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button