পুলিশের ১২ কর্মকর্তাকে ভোট কারচুপির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে: রিজভী

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে কারচুপির জন্য পুলিশের ১২ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘ভোটে কারচুপির জন্য জোন ভাগ করে পুলিশের ১২ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর, ঢাকা বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগে এডিশনাল আইজি, ডিআইজি ও এআইজি র‍্যাংকের অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজশাহী ও রংপুর জোনে র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ডিআইজি ও এআইজি পদমর্যাদার অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খুলনা ও বরিশাল জোনেও একইভাবে এসবির অতিরিক্ত আইজি, ডিআইজি এবং সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন পুলিশ সদর দফতরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জোনগুলোর বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। পুলিশের এই ১২ কর্মকর্তা ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রভিত্তিক আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেন্দ্রের তালিকা, কেন্দ্রভিত্তিক হিন্দু ভোটারদের অবস্থান, কেন্দ্রভিত্তিক বিএনপির অবস্থান, কেন্দ্রভিত্তিক বিএনপির প্রভাবশালীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যালটের বাইরে অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো হবে, যা থানায় ভোটের আগে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। প্রয়োজন মতো ব্যালট বাক্সে ঢোকানো হবে। প্রস্তুত করে রাখা নকল সিল প্যাড প্রিজাইডিং অফিসারদের সরবরাহ করবে পুলিশ। নির্বাচন কমিশনে মূল সিলপ্যাড এবং স্বাক্ষর থাকবে আর বিএনপির পোলিং এজেন্টদের নকল সিলপ্যাড ও স্বাক্ষরে মূল ফলাফল সম্বলিত শিট সরবরাহ করা হবে।’ প্রিজাইডিং অফিসারদের মূল স্বাক্ষরে ফলাফল শিটে ভোট গণনা পরিবর্তন করে রিটার্নিং অফিসারকে পাঠানোর নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।’

গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইকে পর্যবেক্ষকদের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাটি ইলেকশন ওয়ার্কিং ফোরাম নামে ইসির নিবন্ধিত ২০ সংস্থার ব্যানারে একটি মোর্চা গঠন করেছে। এই মোর্চার অধীন ২০ হাজার দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকের তালিকা প্রস্তুত করছে, যারা নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে থাকবে। এই বিষয়গুলো সমন্বয় করছে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ মনাদের নিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সমন্বয় উপ-কমিটি।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাৎ হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে তাদের ভূমিকা ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থের পক্ষে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম নিয়মিত তাদের সঙ্গে ফোনে নির্বাচনের বিভিন্ন ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে থাকেন। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব তাদের মধ্যে সিনিয়র একজনকে দেওয়া হয়েছে। এই কমিশনারের মাধ্যমে ইসিকে এইচ টি ইমাম সব ধরনের নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিদিন সিইসি’র কাছে বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা পাঠানো হয়।’ সিইসির দফতর থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও দাবি করেন রিজভী।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেল স্থাপন করা হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট সেলের কাছে থেকে পরামর্শ নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট কাউকে স্বতন্ত্র প্রার্থী না করার বিষয়ে কড়া নির্দেশনা ছিল। নির্বাচন কমিশনও আপিলে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা বহালের ক্ষেত্রে ওই নির্দেশনা অনুসরণ করেছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারককে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা সেলের আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সারাদেশে দুই লাখ পোলিং এজেন্টকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত ভোট করার বিষয়ে তাদের ভোটকেন্দ্রে অবস্থানের কৌশল শেখানো হচ্ছে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button