ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশে চিকিৎসকেরা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সরকার নানা আশ্বাস দিলেও আসলেই কি বাংলাদেশের চিকিৎসকরা নিরাপদে কাজ করছেন? চিকিৎসকদের কাছ থেকে যে তথ্য মিলছে, তাতে ভয়াবহ ঝুঁকির চিত্রই উঠে আসছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তো নিরাপত্তা সরঞ্জামের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. আব্দুর নূর তুষার ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘আমরা কাউকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলব না। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমাদের আছে, সেগুলো তাদের দেওয়া হচ্ছে।” পরীক্ষার কিট কী পরিমাণ আছে? জবাবে ডা. আজাদ বলেন, ‘‘শুক্রবার ১০ হাজার এসেছে। শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাড়ে ৩ হাজার দিয়েছে, এর সঙ্গে আরো দেড় হাজার এসেছে। আগামী দুএকদিনের মধ্যে এক লাখ চলে আসবে। আমরা এক লাখ না, দুই লাখ কিট মজুদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

গত শুক্রবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পক্ষে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ রশীদ স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘‘সম্পদের স্বল্পতার জন্য হাসপাতালের তরফ থেকে সকলকে মাস্ক সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ঝুঁকি এড়াতে সকলকে নিজ উদ্যোগে মাস্ক ব্যবহার করতে অনুরোধ জানানো হলো।”

এই নোর্টিশের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তারা এই নোর্টিশ দিয়েছেন। আমরা তাদের এই নোর্টিশ প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।”

গত বৃহস্পতিবার সকালে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় নিজেদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। পরে তাদের দাবি মেনে নেয়া হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আবার কাজে যোগ দেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান বলেন, হাসপাতালে ২০০ ইন্টার্ন চিকিৎসক আছেন। তাদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা আগে করেনি৷ অথচ সব ধরনের রোগী হাসপাতালে আসছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করার কাজ তাদের করতে হচ্ছিল।

গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিসের (এফডিএসআর) পক্ষ থেকে উপদেষ্টা ডা. আব্দুর নূর তুষার বলেন, ‘‘সারাদেশ থেকে চিকিৎসকরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে তারা খুব উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে অনেক জ্বরের রোগী দেখতে হয়। এরমধ্যে কারো শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস আছে কিনা তা নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই। নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভস বা কোনো পোশাকও নেই। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তারা। এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন বলেই মনে করি।”

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম বড়ুয়া বলেন, ‘‘আগে ছিল না, তবে এখন এসেছে। আমরা আজই চিকিৎসকদের মধ্যে নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিয়েছি। আরো কিছু মজুদ আছে। অতিরিক্ত কিছু চাওয়া হয়েছে। তবে আমার হাসপাতালে ৫০০ চিকিৎসক আছে। সবাইকে তো পিপিই দিতে পারব না। শুধুমাত্র যারা এই ধরনের রোগী হ্যান্ডেল করছেন তাদের এটা দেওয়া হচ্ছে।”

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক শনিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে এই ভাইরাসে মোট দুই জনের মৃত্যু হলো। মন্ত্রী জানান, নতুন করে আরও চারজনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪ জনে। তিনি বলেন, করোনাতে আক্রান্ত হয়ে যে দুজন মারা গেছেন তারা দুজনই বৃদ্ধ। বিভিন্ন রকমের অসুখে আগে থেকেই আক্রান্ত ছিলেন তারা। সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির মাধ্যমেই তারা আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আরও ৪০০ আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হবে। চিকিৎসকদের জন্য কয়েক লাখ পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট- পিপিই, মাস্ক এসেছে৷ প্রতিনিয়ত আরো বেশি সংখ্যায় এগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। চীনেও অর্ডার প্লেস করা হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, ফলে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলেও জানান মন্ত্রী।

শনিবার মারা যাওয়া ব্যক্তির মিরপুর-১-এর উত্তর টোলারবাগের বাড়িটি যে বহুতল ভবনে, সে ভবনটি পুরোপুরি কোয়ারান্টিন করা হয়েছে। ওই বাড়ি থেকে কেউ বের হবেন না, পাশাপাশি ভেতরেও কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না বলে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাড়িটিতে আরো কয়েকজন বিদেশফেরত বাসিন্দা অবস্থান করছেন। ভবনটিতে ৩০টি পরিবার বসবাস করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button