কালীগঞ্জে শর্ত ভেঙে সরকারি জমি দখলে রেখেছে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বোরো শ্রেণীর সরকারি জমি ইজারা পাওয়ার কথা হতদরিদ্র কৃষকের। এই শ্রেণীর জমি শুধু চাষাবাদের কাজে ব্যবহারের শর্তে এক বছরের জন্য ইজারা দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৮০ শতাংশ জমি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে ইজারা দিয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। ইজারার শর্ত ভেঙ্গে বেআইনিভাবে ওই জমি এখনো দখলেও রেখেছে নাভানা।

২০১৭ সালে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে কালীগঞ্জে বোরো শ্রেণীর ৮০ শতাংশ জমি এক বছরের জন্য ইজারা দেয় সরকার। এই মেয়াদ শেষে প্রতিষ্ঠানটি আরেক বছরের জন্য পুনরায় ওই জমি ইজারা নেয়ার আবেদন করলে দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের তা বরাদ্দ দেয়নি জেলা প্রশাসন। তা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে ওই সরকারি জমি দখলে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তা-ই নয়, ইজারার শর্ত ভেঙে ওই জমিতে বালি ভরাট ও চারদিকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণও করেছে তারা।

সরেজমিন ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়ক-সংলগ্ন পৌর এলাকার বালিগাঁও গ্রামে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের একটি ‘পাইপ অ্যান্ড প্লাস্টিক’ কারখানা রয়েছে। ৬৬১ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল। নাভানার ওই কারখানার পাশে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালিগাঁও মৌজায় রয়েছে ‘ক’ তালিকাভুক্ত এসএ ৪৫৪ খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ১০৯৭ ও ১২৫৪ নং দাগে এবং আরএস ৬৬৯ খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ১৭৯৭ নং দাগে ৮০ শতাংশ বোরো শ্রেণীর অর্পিত সম্পত্তি। সরকারি এই সম্পত্তিই এক বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।

এভাবেই সরকারি সম্পতির চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে দখল করেছে নাভানা কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানাটি উদ্বোধনের পর থেকেই সরকারি ওই জমি নিজেদের কবজায় নিতে কাজ শুরু করে নাভানা কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০১৭ সালে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সরকারি বোরো শ্রেণীর ৮০ শতাংশ জমি ইজারা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ইজারা গ্রহণের পরই সরকারি জায়গার চারদিকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে তারা। আইন অনুযায়ী বোরো শ্রেণীর জমিতে চাষাবাদ ছাড়া অন্যকিছু করার বিধান না থাকলেও অবৈধভাবে সরকারি ওই জমিতে বালি ভরাট শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

ইজারাপত্র সূত্রে জানা যায়, এক বছরের চুক্তিতে নেয়া ওই জমিটির ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৪২৪ বঙ্গাব্দের ৩১ চৈত্র (গত ১৪ এপ্রিল)। এরই মধ্যে গত ৬ ফেব্রুয়ারি জমিটির ইজারা নবায়নের জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসের কাছে আবেদন করে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু সেই আবেদন গ্রহণ না করে বালি ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এর পরও এখনো জমিটি বেআইনিভাবে দখলে রেখেছে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং।

কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র বলছে, বোরো শ্রেণীর ৮০ শতাংশ জমি নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ভোগদখলে থাকায় তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দখল বজায় রাখা ও রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ছয়টি শর্তে অস্থায়ী ভিত্তিতে ওই জমি একসনা লিজ প্রদান করা হয়। ইজারার শর্তে উল্লেখ রয়েছে, সরকারি ওই সম্পত্তির ওপর থেকে কোনো প্রকার গাছপালা কর্তন বা মাটি ভরাট বা মাটি কর্তন করা যাবে না। বিনা অনুমতিতে লিজকৃত সম্পত্তির ওপর ঘরবাড়ি নির্মাণ বা কোনো প্রকার শ্রেণী পরিবর্তন করলে বিনা নোটিসে ইজারা বাতিল করে আগ্রহী ব্যক্তিকে লিজ দেয়া হবে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সোহাগ হোসেন বলেন, যেহেতু জমিটি বোরো শ্রেণীর, তাই সেখানে কৃষি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা যাবে না। জমিটি মূলত শ্রেণী পরিবর্তন না করার শর্তে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিংকে ইজারা দেয়া হয়। কোনো অবস্থাতেই ওই জমির মাটি কাটা কিংবা জমিটি ভরাট করা এবং কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, জমিটির শ্রেণী পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যে বালি ও মাটি দিয়ে ভরাটের খবর আসামাত্র সার্ভেয়ার আব্দুল আলীমকে সেখানে পাঠানো হয়। তিনি গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। পরবর্তীতে সার্ভেয়ার ভরাটের কাজ বন্ধের জন্য নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিংকে নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ইজারা নবায়নের জন্যও আবেদন করেছে। কিন্তু ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে বোরো শ্রেণীর জমিতে বালি ভরাট করায় তাদের ইজারা নবায়ন করা হয়নি।

এদিকে এসএ খতিয়ান ঘেঁটে দেখা যায়, নাভানার ইজারা নেয়া ওই সম্পত্তি এসএ খতিয়ানে মো. ছিদ্দিক ও জমশের আলী নামক দুই ব্যক্তির নামে নথিভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে আরএস খতিয়ানে ৮০ শতাংশের এই জমিটি বোরো শ্রেণীতে ম্যানেজমেন্ট কমিটি ১-এর নামে নথিভুক্ত হয়। সে হিসেবে জমিটি শুধু হতদরিদ্র কৃষকদের চাষাবাদের কাজে ইজারা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সেই নিয়ম পাশ কাটিয়ে ছয় শর্তে সরকারি এই সম্পত্তি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে ইজারা দেয়া হয়। যদিও ইজারাপত্রের শর্ত ভঙ্গ করেও ওই জমি দখলে রেখেছে নাভানা।

ইজারার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও সরকারি জমি দখলে রাখার বিষয়টি জানতে নাভানা গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের এজিএম আবু জাফর বলেন, জমির ইজারা নবায়নের বিষয়টি আমার জানা নেই।

 

এ সংক্রান্ত আরো জানতে…

সরকারি সম্পতি ভরাট করছে নাভানা কর্তৃপক্ষ, নীরব প্রশাসন?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button