কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, লাখ টাকায় রফাদফা!

গাজীপুর কন্ঠ : কালীগঞ্জ জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ডাক্তারের ভুল চিকিসৎসায় মিশু বেগম (২৮) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে স্থানীয় তিন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে ভূক্তভোগী পরিবারের সাথে ১ লাখ টাকায় রফাদফা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বেতুয়া গ্রামের মিন্টু মিয়ার স্ত্রী মিশু বেগম সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের জন্য কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামে অবস্থিত জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ভর্তি হয়। পরে ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে মিশু বেগমের অপারেশন করা হয়। অপারেশন করেন ওই হাসপাতালে অন কলে আসা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যপক ডাঃ মো. মাইনুল ইসলাম। সিজার করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের কারণে ওইদিন রাত ৮টার দিকে মিশু বেগম মারা যায়। পরে স্থানীয় ৩ নামধারী সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ভূক্তভোগী পরিবারকে ঘটনা মিমাংসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য করেন। ওই রাতেই ১ লাখ টাকায় রফাদফা শেষে রাত ১টার দিকে মিশুর লাশ বাড়ীতে নেওয়া হয়। শনিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৯টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। এদিকে সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নবজাতকটি (মেয়ে) এখন বাবা মিন্টুর কাছেই রয়েছে। এর আগেও মিশু-মিন্টু দম্পতির ঘরে ৪ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ডাঃ মো. মাইনুল ইসলাম নিয়মিত কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে বসেন এবং অন কলে উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে সিজার করেন। বছর দেড়েক আগে ওই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ভাদগাতী গ্রামের নওশাদের নবজাতক (ছেলে) মারা যায়।
এছাড়াও আরো একাধিক অভিযোগ রয়েছে ডা.মাইনুলের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে মিন্টুর ছোট ভাই লিটন মিয়া বলেন, ডাক্তার সিজার করতে গিয়ে জরায়ূ কেটে ফেলে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে তার ভাবী মারা যায়। কিন্তু তারা গরিব পরিবার বলে স্থানীয় ৩ জন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাপাচাপি করে। পরে উপায়ান্তর না পেয়ে ১ লাখ টাকায় তারা মেনে নেয়। তাছাড়া পরিবার থেকে মামলার ঝামেলায়ও কেউ যেতে আগ্রহী না। ভাবীর বাপের বাড়ী কুমিল্লায়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখান থেকে কেউ আসতে পারেনি। তবে উপজেলার উত্তরগাঁও এলাকায় ভাবীর এক বড়বোন ছিল স্বামীসহ তিনি এসেছিলেন। তবে তিনি ওই তিন সাংবাদিকের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলঃ ডাঃ মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ঘটনায় আমাদের কোন অবহেলা ছিল না। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হাসপাতালের পরিচালকের সাথে কথা বলার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
পরে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক ডাঃ আসাদুজ্জামানের কাছে বিষয়টি নিয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। আপনি হাসপাতালে এসে কথা বলেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, লোক মুখে ঘটনার কথা শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন হাসপাতালেই মাতৃমৃত্য কাম্য নয়।
এছাড়াও ওই হাসপাতালের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ আসেনি। তবে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।