যত্রতত্র আবর্জনা, অতিষ্ঠ জয়দেবপুর বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : যত্রতত্র আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জয়দেবপুর বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা। এ নিয়ে অসন্তুষ্টি বিরাজ করলেও আবর্জনা সরানোর উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস গলি, মাছ বাজারের প্রবেশমুখ, নতুন নির্মিত বহুতল কাঁচাবাজার ভবন গলি, কাঁচাবাজার গলি, মাংস ও মুরগির বাজারের গলির যেখানে-সেখানে আর্বজনা ফেলে রাখা হয়েছে। আবর্জনা সময়মতো অপসারণ না করায় পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উৎকট দুর্গন্ধে পথচারী, ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিষ্ঠ।

এ ব্যাপারে বাজারের ব্যবসায়ী নিবারণ ভৌমিক বলেন, ‘জয়দেবপুর বাজারটি এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার। কিন্তু এ বাজারে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো ডাস্টবিন নেই। ডাস্টবিন না থাকায় কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট গলিতেই ফেলে রাখে। সিটি করপোরেশনের লোকজন সময়মতো পরিষ্কার না করায় অনেক সময় এক-দুই দিনও আবর্জনা পড়ে থাকে। এসব আবর্জনা পচে অনবরত দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। দোকানে বসা যায় না। ক্রেতা ও পথচারীরাও দুর্গন্ধ ও আবর্জনায় অতিষ্ঠ।’

আরেক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘সিটি করপোরেশন বাজার ইজারা দিয়ে বছরে ৩০-৩৫ লাখ টাকা আয় করে। কিন্তু বাজার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের তেমন উদ্যোগ নেই। বেশির ভাগ ড্রেন ভরাট হয়ে আছে। দূষিত পানি উপচে খোলা জায়গায় পড়ছে। পানি আবর্জনা থেকে প্রতিনিয়িত উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যেখানে-সেখানে আবর্জনা পড়ে থাকায় বাজারের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, অপর দিকে আবর্জনার স্তূপ থেকে মশা-মাছির মাধ্যমে খোলা খাদ্যসামগ্রীতে রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে মাছ, মুরগি ও মাংসের বাজারের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বাজারে ডাস্টবিন তৈরি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি।’

অন্যদিকে এক ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেশির ভাগ দোকান মালিক নিজ দোকানের সামনে ফুটপাতে ভাসমান দোকান বসায়। এসব ভাসমান দোকানের ৮০ শতাংশই শাকসবজি ও কাঁচামাল বিক্রেতা। ভাসমান দোকানি ও ব্যবসায়ীরা বাজারের অলি-গলিতে আবর্জনা ফেলে রাখেন। এসব আবর্জনা সিটি করপোরেশনের অপসারণ করার নিয়ম। কিন্তু তারা প্রায় সময় আবর্জনা সময়মতো সরিয়ে নেয় না।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও নগরীর বেশির ভাগ এলাকা এখনো গ্রামীণ অবস্থায় রয়ে গেছে। গ্রামীণ ও শহর মিলিয়ে গাজীপুর মহানগরীর বাসাবাড়ি ও হাট-বাজারের প্রতিদিন গড়ে ৯০০ মেট্রিক টন আবর্জনা জমা হয়। তার মধ্যে জয়দেবপুর, টঙ্গীসহ শহর এলাকায় ৪০০ মেট্রিক টন এবং আবর্জনাগুলো হয় অনুন্নত এলাকায়। শহর এলাকার ৪০০ টন আবর্জনা সিটি করপোরেশন নগরীর বাইমাইল এলাকার ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে অপসারণ করে। বাকি আবর্জনা স্থানীয়রা নিচু স্থানে ফেলে দেয় অথবা পচিয়ে সার তৈরি করে। যে ৪০০ টন আবর্জনা সিটি করপোরেশন অপসারণ করে সেই আবর্জনাগুলো সকাল থেকে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি স্টেশনে এনে ফেলা হয়। পরে সেখান থেকে নগরীর বাইমাইল এলাকার মূল ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হয়। নগরীতে যে পরিমাণ ডাস্টবিন প্রয়োজন তার পাঁচ শতাংশও নেই। ডাস্টবিন না থাকায় বাজার ও মহল্লার লোকজন বাধ্য হয়ে ময়লা-আবর্জনা সড়ক, গলিপথ বা মার্কেটের সামনে ফেলে রাখে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘৪০০ টন আবর্জনা সরানোর জন্য জনবল ও পরিবহনের সিকি ভাগও সিটি করপোরেশনের নেই। সাবেক মেয়র কয়েক দফা চেষ্টা করেও জনবল নিয়োগ করতে পারেননি। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থানে ডাস্টবিনও নেই। এসব কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলে থাকেন। বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। ওয়ার্ডগুলোর প্রতিটি মহল্লা, বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডাস্টবিন বসানোর একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া আবর্জনা অপসারণের আধুনিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে জাপান সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সার উৎপাদন হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সমস্যা থাকবে না।’ তবে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরার্মশ দিয়েছেন তিনি।

 

সূত্র: কালের কণ্ঠ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button