কোনাবাড়ীর ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে’ থাকা কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : অপহরণ মামলায় ভুক্তভোগী এক কিশোরী গত বছরের ১৬ এপ্রিল থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালিকা) অবস্থান করছে। তবে কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় ওই কিশোরী ২৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। ঢাকার আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন ওই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল সামী।

আদালত সূত্র বলছে, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় কীভাবে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলো, তা তদন্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪। সোমবার আদালত এই আদেশ দেন।

গত ১৪ জানুয়ারি আদালতে জমা দেওয়া শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কিশোরী গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আসে গত বছরের ১৬ এপ্রিল। সম্প্রতি ভুক্তভোগী কিশোরীর শারীরিক পরিবর্তন ধরা পড়ে।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১২ জানুয়ারি প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা। পরে কিশোরীকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে ২৭ সপ্তাহ এক দিনের অন্তঃসত্ত্বা। পরে জিজ্ঞাসাবাদ কিশোরী সব খুলে বলে।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কাছে দেওয়া কিশোরীর জবানবন্দিও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিশোরী বলেছে, গাজীপুরের শিশুকেন্দ্র থেকে বাসে করে ঢাকার আদালতে হাজিরা দিতে আসে। তার সঙ্গে থাকে একজন পুলিশ ও একজন নারী সদস্য। গত বছরের ২৫ জুলাই ঢাকার আদালতে হাজিরা দিয়ে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে সে খেতে যায়। সেখানে দেখা হয় কিশোরীর বাবার করা অপহরণ মামলার আসামির সঙ্গে। সেই আসামিকে প্রেমিক বলে দাবি করে ওই কিশোরী। পুলিশকে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে প্রেমিকের সঙ্গে নির্মাণাধীন খালি রুমে কথা বলে সে। একপর্যায়ে সেখানে প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এ বিষয়টি সে সবার কাছে গোপন রাখে।

মামলার কাগজপত্র বলছে, কাফরুল এলাকায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গত বছরের ১৭ মার্চ বাড়ি থেকে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায় সে। পরে কিশোরীর বাবা ঢাকার আদালতে ওই যুবকের (২৬) বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। মামলার পর ১ এপ্রিল আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে কাফরুল থানা-পুলিশ। একই দিন কিশোরীকেও উদ্ধার করে আদালতে হাজির করা হয়। মা-বাবার কাছে যেতে না চাওয়ায় আদালতের নির্দেশে কিশোরী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থান করছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পান আসামি।

কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান কিশোরীর কথিত প্রেমিক ওই আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ৩১ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার সময় কিশোরীর বয়স ছিল ১৬ বছর ৭ মাস ১৫ দিন। আসামির সঙ্গে তার বিয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত বছরের ১৬ অক্টোবর ওই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

এদিকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় কিশোরীর বাবা জড়িতদের বিচার চেয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতের কাছে আবেদনও করেছেন। তাতে বলা হয়, তার মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরাপত্তামূলক হেফাজতে রাখা হয়। অথচ সেখানে এই দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল? কে ঘটাল? কার সহযোগিতায় ঘটল। এসব রহস্য উদঘাটন হওয়া জরুরি।

 

সূত্র: প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button