কালীগঞ্জে আলিম মাদ্রাসায় নিয়োগপত্র পায়নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী: ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা 

বিশেষ প্রতিনিধি : কালীগঞ্জের চুপাইর জামিউল উলুম (জেড, ইউ) আলিম মাদ্রাসার শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকে নিয়োগপত্র না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় নিয়োগ প্রত্যাশী মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে সরকারি এমপিওভুক্ত ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গাজীপুরের সিনিয়র সহকারী জজ ৫ম আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেছেন।

আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে।

মামলার বাদী মোয়াজ্জেম হোসেন কালীগঞ্জের বোয়ালী গ্রামের মৃত খালেকুজজামানের ছেলে।

বিবাদীপক্ষ মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান (ফারুক মাস্টার), নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ: সাত্তার, বিদুৎসাহী সদস্য সাজেদুল ইসলাম সাজ্জাদ, দাতা সদস্য হেকমত আলী, অভিভাবক সদস্য মোশাররফ হোসেন, জামাল উদ্দিন, গোলজার হোসেন, সালমা বেগম, নুরুল আমিন, শিক্ষক সালাহ উদ্দিন, সুলতানা রাজিয়া এবং  মুজিবুর রহমান।

আদালতে দাখিলকৃত মামলার আবেদন সূত্রে জানা যায়, চুপাইর জামিউল উলুম (জেড,ইউ) আলিম মাদ্রাসার অফিস সহকারী-কাম হিসাব সহকারীর শূন্য পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ৫’শ টাকার পোস্টাল অর্ডারসহ ওই পদের জন্য আবেদন জমা দেয় চাকুরি প্রত্যাশী মোয়াজ্জেম হোসেন। এরপর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র যাচাই বাছাই শেষে গত ২৭ জুলাই মামলার বাদীর বরাবর ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য প্রবেশ পত্র প্রদান করেন।

পরীক্ষা শেষে মোয়াজ্জেমসহ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা দশজনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৩.৫ নাম্বার পেয়ে মোয়াজ্জেম প্রথম স্থান অধিকার করে বলে ঘোষণা দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে তাকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেন ডিজি প্রতিনিধি মাদ্রাসা পরিদর্শক বাদশা মিয়া।

এরপর চাকুরি প্রতাশী মোয়াজ্জেম হোসেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে নিয়োগপত্রের জন্য আবেদন করে। কিন্তু তাকে নিয়োগপত্র দেয়নি মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান (ফারুক মাস্টার) এবং নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ: সাত্তার।

মামলায় আরো বলা হয়, গত ২৬ আগস্ট মাদ্রাসার গবর্নিং বডি সাধারণ সভা করে মোয়াজ্জেমকে নিয়োগ প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেজুলেশন করেছেন। এছাড়াও ওই পদে মোয়াজ্জেমকে নিয়োগ না দিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ৮ সেপ্টম্বর পূনরায় ওই পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

মামলার বাদী মোয়াজ্জেম হোসেনের অভিযোগ, ‘সকল নিয়মনীতি মেনে আমি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ করে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে নিয়োগ না দিয়ে একই পদের জন্য পূণরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যা আইন বহির্ভূত। তাই আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে প্রথমে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি এবং পাশাপাশি এর প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি’।

মাদ্রাসার নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ: সাত্তার বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোয়াজ্জেম হোসেনের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলসহ নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ গভর্নিং বডির কাছে জমা দেয় নিয়োগ কমিটি। কিন্তু গভর্নিং বডির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ওই পদের জন্য আরো ভালো প্রার্থী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। তাই পূণরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে’।

তিনি আরো বলেন, ‘নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়’।

মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান (ফারুক মাস্টার) বলেন, ‘মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয় এবং প্রথম স্থান অধিকার করে। কিন্তু গভর্নিং বডির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ওই পদের জন্য আরো ভালো প্রার্থী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়। তাই পূণরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে’।

তিনি আরো বলেন, ‘রেওয়াজ অনুযায়ী নিয়োগের বিষয়ে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’।

কালীগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর-ই-জান্নাত বলেন, ‘চুপাইর জামিউল উলুম (জেড, ইউ) আলিম মাদ্রাসার অফিস সহকারীর শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে মোয়াজ্জেম হোসেন সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে। কিন্তু মাদ্রাসার গভর্নিং বডি তাকে নিয়োগ না দেওয়ায় সে অভিযোগ করেছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে’।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিবলী সাদিক বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

 

আরো জানতে…..

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চলছে অবৈধ ইট ভাটার নির্মাণ কাজ!

শহীদ ময়েজ উদ্দিনের রোপন করা গাছ বিক্রির ঘটনা ঢাকতে চেয়ারম্যানের লুকোচুরি : নেওয়া হচ্ছে আইনী ব্যবস্থা

কালীগঞ্জে শহীদ ময়েজ উদ্দিনের রোপন করা গাছ বিক্রির অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button