পূবাইলে কারখানার বর্জ্য পানিতে পথে বসেছে ২০০ পরিবার

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পূবাইল রেলস্টেশনের পাশ ঘেঁষে রেল ও নিজের কেনা জমিতে গড়ে ওঠা এএন্ডএ ট্রাউজার কারখানার ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য কালো পানিতে পথে বসেছে ওই এলাকার ২০০ পরিবার।

কারখানার ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি রেল ও সাধারণ কৃষকের জমিতে দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রবাহিত করায় প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে কোনো প্রকার ফসল ফলাতে পারছে না স্থানীয় কৃষকরা। ফলে পথে বসেছে প্রায় ২০০ পরিবার। এমনকি বাদ পড়েনি স্থানীয় এমপি মন্ত্রীর জমিও।

সকালে বিকালে বিকট দুর্গন্ধ পূবাইল রেলস্টেশনের যাত্রীসহ আশপাশের ৩-৪শ’ পরিবারের লোকজনকে নাকে রুমাল দিয়ে চলতে হয়।

মশার উপদ্রবে চিকুনগুনিয়া,ডেক্সগু ভাইরাস জ্বর পেটের পীড়া, বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে।

পূবাইল ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমেন মিয়া বলেন, হাড়িবাড়ির টেক, কলেজগেট, পূবাইল রেলস্টেশনের আশপাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটা চলাচল করা যায় না বিষাক্ত দুর্গন্ধময় বাতাসের জন্য। আমি বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখছি।

ভুক্তভোগীরা জানান, ময়লা বিষাক্ত বর্জ্য পানির স্রোত মিলেছে ৩-৪ কিলোমিটার দূরের বালু নদের। ফলে বালু নদের মাছ মরে প্রায়শই ভেসে উঠে। উদুর-ছিকলিয়া,ডিমাডি, উজীরপুরাসহ বালু নদের তীর ঘেঁষে বসবাসকারী জেলে সম্প্রদায় অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে।

তাছড়া প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ৭-৮ বছর ধরে কোনো প্রকার ফসল ফলাতে পারছে না ভুক্তভোগী কৃষকরা। বিষাক্ত আলকাতরার মতো কালো পানিতে মাছ মরে ভেসে উঠে। কোনো মানুষ পানিতে নামতে পারে না। এমনকি গবাদিপশুর গোসল করাতে পর্যন্ত পারছেন না কৃষকরা।

ভুক্তভোগীরা কারখানা মালিকের প্রতিনিধি ফারুককে বিষয়টি জানানোর পর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের পরামর্শে বর্জ্য শোধনাগার বা এফ্লুয়েন্ট ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপন ও কার্যকর করা হয় কিন্তু তা সব সময়ই অকার্যকর থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুবাইলের হাড়িবাড়ির টেকের প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি ছড়িয়ে পড়ায় এলাকার বৃদ্ধ-শিশু, সর্বস্তরের জনগণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীরা জানান, নিজের জমিতে নিজেই নামতে পারছে না কৃষকরা বিষাক্ত কালো দুর্গন্ধময় পচা পানির কারণে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্য কথা। প্রায় ১ মাস অপেক্ষার পর যোগাযোগ করলে কারখানার জিএম (অ্যাডমিন) ওয়াহিদুল হক জানান, বর্জ্য শোধনাগার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট বা ইটিপি তাদের কার্যকর রয়েছে। কে বা কারা বর্জ্য ফেলছে তা তাদের জানা নেই। তাছাড়া রেলওয়ে থেকে ২ একর ৭ শতক জমি ইজারা নেয়া আছে। পরিত্যক্ত পানি যদি যায় সেটা আমাদের ইজারা নেয়া জমিতেই যায়।

ভুক্তভোগী দেড় বিঘা জমির মালিক মোস্তফা, ৮ বিঘা জমির মালিক শেখ তোফায়েল অপু বলেন, বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মণ ধান পেতাম ৭ বছর ধরে এক ছটাক ধানও আমরা পাই না। ময়লা পানিতে নামতে পারি না, কামলাও মিলে না।

অভিযোগকারী স্থানীয় ইয়ামিন, আরিফ, সুমন, হাফিজুল, আমজাদ, আমিনুদ্দিন, জামাল, বাছির, ছালাম এদের প্রত্যেকেরই দেড় দুই বিঘা করে জমি আছে যা দীর্ঘদিন কোনো ফসল ফলাতে পারছে না।

তা ছাড়া পাশে থাকা আপন ভুবন নামক পর্যটন রিসোর্টের তদারককারী আমিনুল ইসলাম বলেন, দুর্গন্ধময় পানির জন্য ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলতে শুরু করেছে। দুর্গন্ধের জন্য পিকনিকে আসা মেহমানরা চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না। ছোট বাচ্চারা থাকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আবদুস ছালাম সরকার জানান, আগেও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কি না খতিয়ে দেখছি। ৩-৪ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button