বড় পরিবর্তন আসছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায়

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অভিবাসন বিভাগ গতিহীন হয়ে পড়ে। আশ্রয় প্রার্থনার তিন মাসের মধ্যেও সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হত না। এমনকি নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও এর ধীর গতি লক্ষ্য করা যায়।

জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অভিবাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ইতোমধ্যে অভিবাসন নিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন তিনি। পারিবারিক অভিবাসনে ‘পাবলিক চার্জ’ নামের বিষয়টি যাচাই করারও নির্দেশ দিয়েছেন বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেঙেপড়া অভিবাসনব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়েও এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বাইডেন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্কিন অভিবাসনকে কঠিন করার কালাকানুন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাটিকে কঠিন করে তুলেছিলেন। এর মধ্যে পারিবারিক অভিবাসনের বিষয়টি অন্যতম। বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে পারিবারিক অভিবাসনেই এখন প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি মানুষের অভিবাসন ঘটে আমেরিকায়।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৬ লাখ ৭৫ হাজার পারিবারিক ভিসা দিয়ে থাকে। এই ভিসাপ্রাপ্তিকে দুরূহ করার জন্য ট্রাম্প নানা কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। পুরোনো আইনের জের ধরে মার্কিন সরকারের ভর্তুকির মুখে পড়বে-এমন লোকজনকে গ্রিন কার্ড না দেয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল।

আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যবিমা, ফুড স্ট্যাম্প, সরকারি আবাসন সুবিধার মতো সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ গ্রহণকারীদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তি, গ্রিন কার্ড পাওয়া বা নাগরিকত্ব পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। ‘পাবলিক চার্জ’ নামের এই নির্দেশনা নিয়ে অভিবাসী গ্রুপগুলো আদালতে যাওয়ার পরও ট্রাম্পের নির্দেশনা বহাল থাকে।

ম্যানহাটনের আইনজীবী স্টিভেন জন বলেন, জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ার পর অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন মানবিক অনেক ক্ষেত্র, অ্যাসাইলাম, উদ্বাস্তু সংকট দ্রুততার সঙ্গে সমাধান হবে। যেগুলো কার্যত অনেকটা বন্ধ ছিল, সেগুলো চালু হচ্ছে। অভিবাসনের বিষয়গুলো সহজ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে।

গত মার্চ মাস থেকে করোনার অতিমারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছে। দেশের অধিকাংশ নাগরিককেই সরকারি নানা সামাজিক নিরাপত্তা–সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। অভিবাসীদের মধ্যে এসব সুবিধা গ্রহণের হার সংগত কারণেই বেশি।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইন করে পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছিলেন। ট্রাম্পের প্রস্তাব ছিল, মেধাভিত্তিক অভিবাসনের। নানা কালাকানুন করে শ্বেতাঙ্গবহুল দেশগুলো থেকে আমেরিকায় অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন ট্রাম্প।

অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয়েছে। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে আসা লোকজনকে ‘ডিটেনশন’ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছে। নতুন নতুন ‘ডিটেনশন’ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে।

ট্রাম্প সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করে অভিবাসন ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। তার সময়ে সীমান্তে মা-বাবার সঙ্গে আসা অভিবাসী শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ক্ষমতা গ্রহণ করে অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের উল্টো যাত্রা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

বাইডেন ক্ষমতায় এসেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অভিবাসী শিশুদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বিতাড়ন সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছেন। পৃথক আদেশে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমেরিকায় আসা লোকজনের অভিবাসনপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভ্যালস’ (ডাকা) নামের কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বাইডেন ক্ষমতায় এসেই ডাকা কর্মসূচি আবার চালু করেছেন। অভিবাসী এই গ্রুপকে আমেরিকার নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তাদের এদেশে থাকার এক ধরনের বৈধতা দেয়া হয়। প্রতি দুই বছর পরপর ‘ডাকা’ নবায়ন করতে হয়। এর মধ্য দিয়ে একজন আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ও কাজ করার অনুমতি পান। তবে শর্ত হিসেবে তিনি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারবেন না। এই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৮ লাখের বেশি মানুষ নিবন্ধিত রয়েছেন।

বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়ার আবেদন সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। ট্রাম্পের সময় বাইরের দেশে ভিন্নমত ও ভিন্ন আদর্শের কারণে নিপীড়িত লোকজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদন কঠিন হয়ে উঠেছিল। বাইডেন আমলে আশ্রয় আবেদনকে সহজ করার জন্য নানা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, নিপীড়ন বন্ধ করাসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আমেরিকা উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে, বাইরের দেশ থেকে আমেরিকায় আশ্রয়ের চাপ কমবে বলে মনে করছেন নতুন প্রশাসনের নীতিনির্ধারকেরা।

ডেমোক্রেটিক পার্টির এমন অভিবাসন উদারতায় রক্ষণশীলরা ইতোমধ্যে উৎকণ্ঠিত। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জেমস কমার বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের উদার অভিবাসননীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠবে। সীমান্তে লোকজনের ভিড় বেড়ে গিয়ে মানবিক সংকট সৃষ্টি হবে।

এছাড়া নথিপত্রহীন অভিবাসীদের প্রতি অনুকম্পা ঘোষণার মাধ্যমে ভুল বার্তা দেয়া হবে। মার্কিন অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করে সহজেই পার পাওয়া যায় বলে লোকজন আইনভঙ্গ করতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন এই আইনপ্রণেতা।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে দ্রুতই পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে আইনপ্রণেতাদের দ্রুত সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। একটি মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অভিবাসন আইন চালু না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকায় অভিবাসীদের আগমন কাম্য নয় বলে প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ওপি ওয়ান চালু করেছিলেন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ১৯৮৯ সালের দিকে। রিপাবলিকান এই প্রেসিইডেন্ট যিনি সিনিয়র বুশ নামে পরিচিত, তিনি ‘ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট অব ১৯৯০’ সই করেছিলেন। ডেমোক্রেটদের সমর্থন নিয়েই ১৯৯০ সালের ২৯ নভেম্বর এই কার্যক্রমে সই করার মধ্য দিয়ে চালু হয় ডিভি লটারি বা ডাইভারসিটি ভিসা কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে পিছিয়েপড়া দেশগুলোর জন্য লটারির মাধ্যমে বছরে ৫৫ হাজার অভিবাসী ভিসা ইস্যু করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button