কালীগঞ্জে ডাকাতদের হানা, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জে বিদেশ ফেরত শামীম (৪২) নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে একদল ডাকাত হানা দেয়। পরে অস্ত্রের মুখে সকলকে জিম্মি করে এক এক করে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও মোবাইল লুট করছিল ডাকাতদল। এমন সময়ে জিম্মি দশায় থেকেই জাতীয় জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ ফোন করেন একজন। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। পরে জিম্মি দশা থেকে সকলকে এক এক করে উদ্ধার করে পুলিশ।
৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ভোর রাত ৩টা ৪৬ মিনিটে পৌরসভার পূর্ব বালীগাঁও এলাকায় পৌঁছে ভুক্তভোগীদের জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শামীম বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের জুগলী এলাকার মৃত হান্নানের ছেলে। তিনি পাঁচ মাস পূর্বে ওমান থেকে দেশে ফিরেন। এরপর থেকেই তিনি পূর্ব বালীগাঁও এলাকায় নাভানা পাইপ এন্ড প্লাস্টিক কারখানা সংলগ্ন নির্মিত বাড়ির দোতলায় থাকেন।
এছাড়াও একই রাতে কালীগঞ্জ পৌরসভার বাঘেরপাড়া এবং বক্তারপুর ইউনিয়নের বেলনা গ্রামেও ডাকাতরা হানা দিয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও ওই দুই ঘটনায় লুট করতে ব্যর্থ হয়েছে ডাকাতরা।
বালীগাঁও এলাকায় ডাকাতদের জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার হওয়া শামীমের স্ত্রী সুমা আক্তার বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোর রাত আনুমানিক তিনটার দিকে বাড়ির দোতালায় আমাদের দরজায় আজানা কেউ নক করে। নিচ তলার ভাড়াটিয়া এসেছে ভেবে আমার স্বামী দরজা খুলতেই একদল ডাকাত ভেতরে প্রবেশ করে। পরে আমার স্বামী এবং দুই ছেলে রায়হান আহমেদ বাপ্পী (১৮) ও জোনায়েদ(৯)-এর হাত-পা বেঁধে রাখে ডাকাতরা। এরপর দেশীয় অস্ত্রের মুখে সকলকে জিম্মি করে ফেলে ডাকাত দলের সদস্যরা। পরে ডাকাতরা স্টিলের আলমিরা ভেঙ্গে প্রায় তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার, আনুমানিক ১৫ হাজার টাকা এবং তিনটি মোবাইল লুট করে। পরে আমার ছেলেকে নিয়ে নিচতলায় গিয়ে এক ভাড়াটিয়ার দরজায় নক করে এবং তাদের ডাকতে বাধ্য করে। পরে দরজা খুললে তাদের বাসায় প্রবেশ করে ৫ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল লুট করে ডাকাতরা। এমন সময় বিষয়টি বুঝতে পরে অপর এক ভাড়াটিয়া ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের বাঁশির শব্দ পেয়ে ডাকাত দল বাহির থেকে বাড়ির সকল দরজা এবং গেইট বন্ধ করে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে আমাদের সকলকে উদ্ধার করে। ডাকাত দলে মুখোশধারী ৮ থেকে ১০ জন ছিল। এ বিষয়ে সকালে আমার স্বামী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।”
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে কালীগঞ্জ থানায় কর্তব্য পালন করা উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন বলেন, ভোর রাতে ৯৯৯-নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিক ওই এলাকায় কর্তব্যরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জিল্লুর রহমানকে ফোন কল ফরোয়াড করি। এছাড়াও সে সময়ই থানার অফিসার ইনচার্জসহ সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি।
কালীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জিল্লুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে আমি কাপাসিয়া মোড় থেকে ঘোড়াশাল ব্রিজ এলাকায় টহলরত অবস্থায় কর্তব্য পালন করছিলাম। ভোর রাত ৩ টা ৪২ মিনিটে ফোন কল পাই। সে সময় আমি ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অবস্থান করছিলাম। কল পাওয়ার ৪ মিনিটের মধ্যেই ৩টা ৪৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে যাই। পরে জিম্মি দশা থেকে সকলকে উদ্ধার করি। এরপর আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, সে সময় ভুক্তভোগীরা জানায় তাদের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়ে সকলকে জিম্মি করে বেশ কিছু টাকা, মোবাইল এবং স্বর্ণালংকার লুট করেছে।
ঘটনা দুই
অপর দিকে এর অল্প কিছু দূরত্ব সামনেই বাঘেরপাড়া নামক স্থানে ভিআইপি ফার্নিচারের কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা এক কর্মীকে ডাকাতদলের সদস্যরা আঘাত করে আহত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, বুধবার দিবাগত মধ্যে রাতে বাঘেরপাড়া এলাকায় ভিআইপি ফার্নিচারের কারখানার সামনে দিয়ে সন্দেহজনক মুখোশধারী বেশকিছু লোককে ঘোরাফেরা করতে দেখে নিরাপত্তাকর্মী তাদের দিকে টর্চ লাইট মারলে তারা এগিয়ে এসে জানালা দিয়ে রট দিয়ে তাকে আঘাত করেলে তিনি আহত হন।
আহত নিরাপত্তাকর্মী বাঘেরপাড়া এলাকার মৃত রজব আলী ভুঁইয়ার ছেলে জামান ভূঁইয়া (৪৫)।
জামান ভূঁইয়া বলেন, রাত অনুমানিক ২ টা ৩০ মিনিটের সময় মুখোশধারী বেশ কয়েকজনকে কারখানার সামনের সড়কে ঘোরাফেরা করতে দেখে কারখানার ভেতর থেকে আমি তাদের দিকে টর্চ লাইট মারি। সে সময় তারা আমার দিকে এগিয়ে আসলে আমি ভেতর দিয়ে গেইট বন্ধ করে দেই। পরে অফিস কক্ষের জানালায় রট দিয়ে তারা আঘাত করলে আমার হাতে লাগে।
ঘটনা তিন
এছাড়াও বক্তারপুর ইউনিয়নের বেলনা গ্রামেও বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ভোর রাতে আক্তার হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
আক্তার হোসেন ওই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।

আক্তার হোসেন বলেন, ভোর রাতে জেগে দেখি বাড়ির কলাপসিবল গেইট এবং তালা ভাঙ্গার চিহ্ন রয়েছে। পরে তালা খোলার চেষ্টা করে দেখি তালা খোলা যাচ্ছে না। এরপর তালা কেটে বাড়ি থেকে বের হই। ধারণা করা হচ্ছে ডাকাতরা বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য তালা ও কলাপসিবল গেইট ভাঙ্গার চেষ্টা করেছিল। সকালে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা বাড়িতে এসে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
এসকল বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক বলেন, ‘বালীগাঁও এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য: গত ১০ জুন (বৃহস্পতিবার) দিবাগত মধ্যে রাতে পৌরসভার বাঘেরপাড়া এবং ঘোনাপাড়া এলাকায় দুই ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা নগদ অর্থ এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।
এছাড়াও গত ৬ জুন (রোববার) ভোর রাতে উত্তর বালীগাঁও এলাকায় সিরাজুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছে। ডাকত দলের সদস্যরা নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং প্রায় তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।
আরো জানতে……
কালীগঞ্জে আবারো দুই ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুট
কালীগঞ্জে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি, নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট