হয়রানি ও পুলিশের উৎকোচ আদায়ের জন্যই গায়েবি, মিথ্যা ও অজ্ঞাত পরিচয় মামলা?
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ‘মিথ্যা মামলা’ বললেই সবকিছু স্পষ্ট হয়না। মিথ্যা মামলার আরেক সংস্করণ ‘গায়েবি মামলা’, যা এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশ আলোচিত হয়েছিল। আরও আছে মৃত ব্যক্তির নামে মামলা, অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামালা।
মামলার এই নানা প্রকারভেদ নিয়ে কথা বলার আগে সংজ্ঞা নির্ধারণের চেষ্টা করা যাক:
মামলা: যে মামলার অভিযোগ সত্য নয়৷ অথবা যা ঘটেছে তা বাড়িয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, ঘটনা ঘটেছে কিন্তু যাদের আসামি করা হয়েছে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
গায়েবি মামলা: গায়েবি মামলা শব্দটি সামনে আসে ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে। এইসব মামলায় আসলে ঘটনাই ঘটেনি বলে অভিযোগ৷ ঘটনা সাজিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে। গায়েবি মামলা প্রধানত রাজনৈতিক।
অজ্ঞাত পরিচয় মামলা: এইসব মামলায় দু-একজন আসামির নাম থাকলেও বাকি আসামিরা থাকেন অজ্ঞাত পরিচয়। তাদের নাম ঠিকানা থাকেনা। আবার মামলার সব আসামিই অজ্ঞাত পরিচয় হতে পারে।
প্রথম দুই ধরণের মামলা হয়রানিমূলক। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন অথবা ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষকে দমনে এই ধরণের মামলা হয়। আর অজ্ঞাত পরিচয় আসামির মামলায় হয়রানি ও পুলিশের উৎকোচ আদায়ের বড় সুযোগ থাকে। কারণ তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহজনক হিসেবে ওই মামলায় যে কাউকে আটক করতে পারে পুলিশ। এই ধরণের মামলা রাজনৈতিকভাবেও ব্যবহার হতে পারে। কোনো রাজনৈতিক কর্মী বা নেতাকে আটকের পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও ওই ধরণের কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর সুযোগ থাকে।
গায়েবি মামলার নমুনা
গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচারে আদালত বসানোকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হন। ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছে বলে চকবাজার থানায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় যাদের আসামি করা হয় তাদের মধ্যে আজিজ উল্লাহ নামে একজন কথিত ঘটনার ১৬ মাস আগেই ২০১৬ সালের মে মাসে মারা যান। মামলাটির বাদি পুলিশ নিজেই।
এর আগে একইভাবে ৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা করে চকবাজার থানা পুলিশ। সেই মামলায় আসামিদের মধ্যে একজন বিএনপি নেতা খতিবুর রহমান তাঁর এক মাস আগে ওই বছরের ১০ আগস্ট হজ করতে সৌদি আরব যান।
ওই সময়ে দু’টি ঘটনা নিয়েই সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাতে বলা হয় যে দুটি ঘটনার অভিযোগে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওই দুটি ঘটনায় ককটেল বিস্ফোরণ বা হামলার ঘটনা অস্তিত্বহীন। আর দু’টি মামলায়ই এজাহারনামীয় ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয় আসামি আছে।
মৃত ব্যক্তির নামে মামলা, ওয়ারেন্ট, চার্জশিট
২০১৬ সালের ২৬ জুন ঢাকার মিরপুর মধ্য পাইকপাড়ার হাবিবুর রহমানের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ২৯ জনকে আসামি করে মিরপুর থানায় মামলা হয়। কিন্তু মামলায় ১২ নম্বর আসামি আরিফুর রহমান ঘটনার অনেক আগেই মারা যান। আর ১৯ নম্বর আসামি রুবেলের বয়স এক বছরের কম। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, মিরপুর মডেল থানার পুলিশ মামলার তদন্ত করে মৃত ব্যক্তি এবং শিশুর নামেও চার্জশিট দেয়। আর তদন্ত চলাকালে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের মে মাসে মামলাটির বিচার পর্যায়ে এই ঘটনা ধরা পড়ে।
আদালতে গায়েবি মামলা
নির্বাচনের আগে গায়েবি মামলার বিষয়টি আদালতে নিয়ে যায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা৷ ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তিন হাজার ৭৩৬টি গায়েবি মামলা দায়ের করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব মামলায় আসামি করা হয় তিন লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনকে। আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় কয়েক হাজার। এইসব ‘গায়েবি এবং মিথ্যা মামলা’ বন্ধ এবং যে মামলাগুলো করা হয়েছে সেব্যাপারে তদন্ত চান তারা।
শুনানির সময় আদালতে আইনজীবীরা বলেন, ১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন লোকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে৷ ২০০৭ সালে মারা গেছেন এমন লোককেও আসামি করা হয়েছে। শুনানির সময় কয়েকটি মামলার এজাহার পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘‘এ ধরনের মামলায় (গায়েবি) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়।’’ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ এই রিটের ওপর বিভক্ত আদেশ দেন। পরে তৃতীয় বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেয়।
নারী নির্যাতন মামলায় মিথ্যার প্রাধান্য
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ২১৯টি, ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৭৩০টি, ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ৪৮৬টি, ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৬১৩টি, ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ৯১টি, ২০১২ সালে ১৯ হাজার ২৯৫টি এবং ২০১১ সালে ১৯ হাজার ৬৮৩টি। পুলিশ সদরদপ্তর জানায় তদন্তে দেখা গেছে, এসব মামলার ৯০ ভাগই ভুয়া।
আর ২০১৩ সালে তখনকার আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ঢাকায় এক সেমিনারে দাবি করেন, ‘‘নারী নির্যাতন মামলার ৮০ শতাংশই মিথ্যা মামলা।’’ আর তখনকার আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘যৌতুক নিয়ে যেসব মামলা হয়, তার ৯০ শতাংশই মিথ্যা।’’ তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে ১০০ ভাগ আসামির সাজা হয়। আর আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ খালাস পায়৷ এর কারণ মিথ্যা মামলা।’’
মিথ্যা ও গায়েবি মামলা কেন হয়
মিথ্যা ও গায়েবি মামলার মূল কারণ প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও ঘায়েল করা। এর সঙ্গে শুধু মামলার বাদি নয়, পুলিশ এবং এক শ্রেণির আইনজীবীও জড়িত থাকেন। থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশের হাত থাকে। আর আদালতের মামলায় হাত থাকে কিছু আইনজীবীর। আর যেসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য দায়ের করা হয় তার পেছনে থাকে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। আর অজ্ঞাতপরিচয় আসামি মামলায় দেয়ার মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে অর্থ আদায়। আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রয়োজন অনুযায়ী ওই সব মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘এবারের নির্বাচনের আগে আমরা মিথ্যা বা গায়েবি মামলার রাজনৈতিক ব্যবহার দেখেছি। আর অতীতে এত অল্প সময়ে এত বেশি গায়েবি মামলা আমরা হতে দেখিনি। এর উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ঘায়েল করা। তাদের ভয়ের মধ্যে রাখা অথবা কারাগারে আটক রাখা। এইসব মামলার মধ্য দিয়ে রাজনীতি করার যে অধিকার তা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতাকে সংকুচিত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘তবে মিথ্যা মামলা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। স্থানীয় বিরোধ, দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ, জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব এসব কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা অতীত থেকে চলে আসছে। তবে এবার রাজনৈতিক গায়েবি মামলা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটা সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাবে হয়েছে, যা আমাদের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করে।’’
অজ্ঞাত পরিচয় মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটা সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং পুলিশের উৎকোচ আদায়ের একটি বড় হাতিয়ার। নিরীহ ব্যক্তিকে ওইসব মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক বা আটকের ভয় দেখিয়ে এক শ্রেণির পুলিশ বাণিজ্য করে। আর এর রাজনৈতিক ব্যবহারও আছে। কোনো রাজনৈকি নেতা-কর্মীকে আটকের পর কোনো মামলা না থাকলে অজ্ঞাত পরিচয় মামলায় আটক দেখানো হয়।’’
দায় কার?
গায়েবি, মিথা মামলার দায় কার? পুলিশ ছাড়াও রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের চাপ এবং মামলাবাজদের দায়ী করা হয়। কিন্তু পুলিশের সাবেক এআইজি এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম পুলিশকে প্রধানত দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘থানায় যে-কোনো মানুষ যে-কোনো অভিযোগ নিয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু পুলিশ যদি তার দায়িত্ব পালন করে তাহলে মিথ্যা বা গায়েবি মামলা অনেকটাই এড়ানো যায়। পুলিশের কাজ হলো যে-কোনো অভিযোগ এজাহার আকারে নেয়ার আগে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক তদন্ত করা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা এবং নিরপেক্ষ মানুষের সঙ্গে কথা বলা। এটা করলে মিথ্যা মামলা এড়ানো সম্ভব। তারপরও মিথ্যা মামলা হলে তদন্ত পর্যায়ে সেটা সুরাহা করা সম্ভব। কিন্তু যদি তদন্ত না করে অফিসে বসে কাজ করেন তাহলেতো আর কিছু করার থাকেনা। এগুলো দেখার জন্য সুপারভাইজিং অফিসার হিসেবে পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া আছে। তারা এটা ঠিকমত করেন বলে আমার মনে হয়না।’’
তিনি বলেন, ‘‘অজ্ঞাত আসামি বলে এজাহারে কিছু থাকার কথা নয়। এটা করা হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে। একটা মামলায় কয়েকশ’ অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এটা পুলিশ করে অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য। নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার জন্য। কিসের অজ্ঞাত? এখন জানা না গেলে তদন্তে জানা যাবে।’’
রাজনৈতিক চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো অনৈতিক আদেশ মানতে বাধ্য নন। পুলিশ যদি নৈতিক অবস্থানে থাকে, একটু সাহস দেখায় তাহলেই কেউ তাঁকে মিথ্যা বা গায়েবি মামলায় বাধ্য করতে পারেনা। আসলে এটা অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তার কারণে হয়। তারাও অনৈতিক সুবিধা নেয়, বিনিময়ে রাজনৈতিক সার্ভিস দেয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা মানুষকে অনেক কষ্টের মধ্যে ফেলে। পুলিশের কাজ হচ্ছে মানুষকে ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করা, হয়রানি করা নয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান ছাড়া থানায় বসে দালালের মাধ্যমে মামলা নিতে মৃত ব্যক্তি যে আসামি হবেন তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?’’
প্রতিকার কী?
মিথ্যা বা গায়েমি মামলার আইনগত প্রতিকারের বিধান সাধারণভাবে যেমন দণ্ডবিধিতে আছে আবার বিশেষ কিছু আইনে আলাদাভাবে প্রটেকশন ক্লজও আছে। কিন্তু মামলা হয়ে গেলে হয়রানি থেকে মুক্তি নেই। কারণ যিনি এর শিকার তাকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে মামলাটি মিথ্যা অথবা তাকে মিথ্যা আসামি করা হয়েছে। এর আগে ওই মিথ্যা মামলায় তাকে হাজিরা দিতে হবে, আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। এমনকি আটক হয়ে কারাগারেও যেতে হতে পারে। মিথ্যা মামলা থেকে তদন্ত পর্যায়েও রেহাই পাওয়া যেতে পারে। আর তা সম্ভব না হলে বিচারের মাধ্যমে রেহাই পেতে হবে। তবে এর বাইরে মিথ্যা মামলা বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতেও আবেদন করা যায়। আদালত সন্তুষ্ট হলে মামলা স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।
ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, ‘‘মিথ্যা মামলা প্রমাণ করা গেলে এরজন্য ক্ষতিপূরণও পেতে পারেন। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত হয়রানির শিকারতো হতেই হবে।’’
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ বজলুল করিম বলেন, ‘‘পুলিশই পারে এই হয়রানি থেকে নিরীহ মানুষকে বাঁচাতে। মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করলেই মিথ্যা মামলা কমে যাবে। এজাহার দায়েরের আগেই সুবিবেচনা প্রয়োগ করতে হবে। কারণ এজাহার একবার দায়ের হলে সেটা আর সংশোধনের তখন সুযোগ থাকেনা।’’
দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ যদি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে বাদির বিরুদ্ধে ওই ধারায় মামলা করা যায়। আর ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন আদালত। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আমলযোগ্য নয় এ রকম কোনো মামলায় মিথ্যা প্রতিবেদন দিলে তার বিরুদ্ধেও এ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন আদালত।
ব্যারিস্টার মিতি সানজানা জানান, ‘‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় মিথ্যা মামলা বা অভিযোগের দায়ে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আবার যৌতুক আইনেও মিথ্যা অভিযোগকারীর শাস্তির বিধান আছে। কারণ পারিবারিক বিরোধ এবং সহিংসতার মামলায় প্রচুর মিথ্যা মামলা হয়। মিথ্যা মামলা ছাড়াও দণ্ডবিধির ১৯৩, ১৯৪ এবং ১৯৫ ধারায় স্পষ্ট বলা বলা আছে মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে মিথ্যা মামলায় সহায়তা অপরাধ। এই অপরাধে ৭ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদি এমন একটি মিথ্যা মামলা করা হয় যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তাহলে এই মিথ্যা মামলার শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড।’’ তদন্ত পর্যায়ে মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব হলো ওই মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে মামলার জন্য আদালতে আবেদন করা।
কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও প্রতিকার পাওয়ার নজির বিরল। আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ দেখা যায়না বললেই চলে। আর এই প্রতিকার পাওয়া এক দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়ার ব্যাপার। মিতি সানজানা বলেন, ‘‘তাই মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে দরকার আইনের শাসন, সুশাসন। বিচার প্রক্রিয়ার একটি অংশ পুলিশ। তাই মামলা দায়েরের সময়ই যদি পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে মিথ্যা মামলা এড়ানো যায়। আর রাজনৈতিক কারণে, প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা মামলার কালচার দূর করতে প্রয়োজন গণতন্ত্র ও সুশাসন।’’
এ সংক্রান্ত আরো জানতে……..