চাঁদের ‘অন্ধকার অংশে’ চীনের অভিযান

গাজীপুর কণ্ঠ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : হলিউডের ট্রান্সফরমারস সিনেমার কল্যাণে ‘ডার্ক অব দ্য মুন’ আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত। তবে এ শব্দবন্ধটি আরও আগে ব্যবহার করেছে ব্রিটিশ ব্যান্ড পিংক ফ্লয়েড; ১৯৭৩ সালে তাদের বিখ্যাত ‘দ্য ডার্ক সাইড অব দ্য মুন’ অ্যালবামের মাধ্যমে।

এবার চাঁদের সেই দূরবর্তী ‘কালো’ অংশে অভিযান চালাচ্ছে চীন। পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের অন্ধকার অংশের উদ্দেশ্যে রোভার পাঠিয়েছে তারা।

পৃথিবী থেকে চাঁদের যে অনিন্দ্যসুন্দর রূপ আমরা দেখতে পাই এর বাইরেও তার আর একটি দিক রয়েছে। সেটিই চাঁদের ‘অন্ধকার অংশ’। আসলে অন্ধকার অংশ কথাটি বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়। চাঁদের দুই অংশেই সূর্যে আলো সমানভাবে পৌঁছায়। মূল ব্যাপার হল, চাঁদ পৃথিবীর সাথে ‘টাইডালি লকড’। অর্থাৎ, চাঁদ সবসময় পৃথিবীর সাথে একই মুখ করে থাকে। ফলে বিপরীত অংশটি আমরা দেখতে পাই না। তাই সাধারণ অর্থে সেটি আমাদের কাছে অন্ধকার।

এখন অবধি মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত অভিযান হয়ে গেলেও মোটামুটি অজানাই রয়ে গেছে চাঁদের দূরবর্তী অংশ। এর আগে ঐ অংশে মহাকাশযান গিয়েছিল কিন্তু সেখানে অবতরণ করেনি। ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেবল কালো অংশের কিছু ছবি তুলেছিল। ১৯৬৮ খালি চেখে প্রথমবার সে অংশের দেখা পান অ্যাপেলো-৮ এর মহাকাশচারীরা।

চাঁদের দুই দিকের উজ্বলতা সমান হলেও ভূ-প্রকৃতিতে আছে অনেক তফাৎ। দৃশ্যমান অংশ মোটামুটি সমতল কিন্তু অন্ধকার অংশ এবড়ো-থেবড়ো ও গিরিময়। এমনকি ঐ অংশের ভূমির গভীরতাও বেশি। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণে সৃষ্ট গর্তের সংখ্যা কালো অংশে বেশি। চাঁদের দুই অংশের মধ্যে কেন এত পার্থক্য তা আজও জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

এত অজানাকে জানার জন্যই চীনের এ অভিযান। শনিবার একটি লং মার্চ ৩বি রকেটে করে চাং’ই-৪ রোভার চাঁদের অন্ধকার অংশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। চীনের সিচুয়ান প্রদেশের শিচাং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রোভারটি প্রেরণ করা হয়।

চীনের পাঠানো রোভারটিতে থাকছে ক্ষুদ্র তরঙ্গের রেডিও, চাঁদের ভূমি পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি। এ মিশনে চাঁদের অজানা অংশের পরিবেশ কেমন তা জানার চেষ্টা করা হবে।

সব মিলিয়ে দশটি পরীক্ষা চালাবে রোভারটি। এর মধ্যে চীনের হয়ে চালাবে ছয়টি ও অন্যান্য দেশের হয়ে চালাবে চারটি। এসব পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে খনিজ পদার্থ পরীক্ষা, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ।

মূলত যোগাযোগের সমস্যার কারণেই চাঁদের দূরবর্তী অংশে অভিযান পরিচালনা কষ্টসাধ্য। চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্সের অধ্যাপক অওইয়াং জিউয়ান বলেন, ‘এই অভিযানের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে যোগাযোগ। কেননা, চাঁদের অজানা অংশ থেকে পৃথিবীতে সরাসরি সংকেত পাঠানোর কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা অনেকটা অন্ধ ও বধির অবস্থায় থাকবো।’

অবশ্য এ সমস্যা দূরীকরণে চীন চলতি বছরের মে মাসে চাঁদের কক্ষপথে ‘ম্যাগপাই ব্রিজ’ নামে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এখন দেখা যাক, চাঁদের ‘অন্ধকার দিক’আমাদের জন্য কী রহস্য নিয়ে অপেক্ষা করছে!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button