এক টাকার কাবিনে বিয়ে করা পিয়াসা কিভাবে কয় টাকার মালিক?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : অবশেষে বহুল আলোচিত, তথাকথিত মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালে রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় প্রথম আলোচিত হন মডেল পিয়াসা। কিন্তু আসল ঘটনা তা নয়। এর আগেই আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।

রেইনট্রির ঘটনার প্রায় এক বছর আগেই তিনি আলোচনায় আসেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে ব্যবসায়ী শাফাত আহমেদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। তখন গণমাধ্যমকে পিয়াসা নিজেই জানান, ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি ঢাকায় দীর্ঘদিনের প্রেমিক শাফাতকে (রেইনট্রি ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এবং পিয়াসার সাবেক স্বামী) তিনি বিয়ে করেছেন।

সে সময় কয়েকটি গণমাধ্যমে পিয়াসার পরিচয় দেয়া হয় ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা তরুণী হিসেবে। আবার অনেক জায়গায় খবর প্রকাশিত হয়- এনটিভির রিয়েলিটি শো ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’র অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন পিয়াসা। তবে মডেলিং-অভিনয়ে নিয়মিত হননি তিনি। অনেকদিন কাজ করেছেন এশিয়ান টেলিভিশনের পরিচালক এবং প্রিভিউ কমিটির প্রধান হিসেবে।

২০১৭ সালে রেইনট্রির ঘটনার কিছুদিন আগেই গুলশানের একটি কাজী অফিস থেকে শাফাতের পক্ষে তালাকের নোটিশ পাঠানো হয় বলে জানা যায়।

ওই ঘটনার পর জানা যায়, তাদের বিয়েতে মাত্র ১ টাকার কাবিন হয়েছিল। এ নিয়ে পিয়াসা গণমাধ্যমকে বলেন, “ভালোবেসে দু’জনের সম্মতিতে বিয়ে করেছিলাম। আর দেনমোহর এক টাকা করার বিষয়টিও দু’জনের সম্মতিতেই হয়। আমার যদি টাকার লোভ থাকত তাহলে আমি তো অনেক টাকাই কাবিন করতে পারতাম। তারা কী (আপন জুয়েলার্সের মালিক) বলতে পারবে আমি তাদের কাছ থেকে এক লাখ টাকার গয়না নিয়েছি?”

সাবেক পুত্রবধূর কথার সত্যতা পাওয়া যায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের কথায়ও। তিনি বলেন, “ছেলের কাছে এক টাকা দেনমোহরের কাহিনী শুনতে চেয়েছিলাম। ছেলে বলেছিল, পিয়াসা তাকে নাকি এত ভালোবাসে তাই এক টাকা দেনমোহর করে তা প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু বিয়ের পরদিনই দেখেছি উল্টোটা। মানুষ কত অভিনয় করতে জানে! আমার সম্পদের দিকে পিয়াসার নজর ছিল। তাই তো পিয়াসা এক টাকা দেনমোহর করে ভালোবাসার সম্পর্কের নামে অভিনয় করেছে। পিয়াসা আমার ছেলেকে বলেছিল, ‘তোমার টাকা চাই না, ভালোবাসা চাই।’ অথচ বিয়ের পর একে একে মুখোশ উন্মোচন হতে থাকে। এক টাকার কাবিননামার নামে যে কৌশল করা হয়েছিল তার নেপথ্যের ঘটনা বের হতে থাকে। পিয়াসা আমার ছেলেকে দিয়ে আপন জুয়েলার্সের সম্পদ লুটের চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ায় শাফাতকে ব্ল্যাকমেইলিং করা হয়।”

উল্লেখ্য, আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার তার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার নেপথ্য কারিগর হিসেবে পিয়াসাকে অভিযুক্ত করেছিলেন। পরে অবশ্য তাদের মধ্যে সমঝোতা হয় বলে খবর প্রকাশিত হয়। ধর্ষণের শিকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে সহায়তার কথা স্বীকার করলেও কয়েক দিনের মাথায় পিয়াসা তাদের মীমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। এজন্য পিয়াসার বিরুদ্ধে দুটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৫ মার্চ নিজের ও পরিবারের লোকজনের প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান এবং ৫ কোটি টাকা দাবির অভিযোগে সাবেক পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন দিলদার আহমেদ। ১১ মার্চ দিলদারের বিরুদ্ধেও একটি মামলা করেন পিয়াসা।

এবছর আবারও আলোচনায় আসেন পিয়াসা। গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর পরিবারের পক্ষ থেকে যে মামলা দায়ের করা হয়, তাতেও পিয়াসার নাম রয়েছে।

এদিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বারিধারার ৯ নম্বর সড়কের একটি বাসা থেকে পিয়াসাকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, “তাদের (পিয়াসা এবং মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার আরেক মডেল মৌ) বাসায় বিভিন্ন ধরনের মাদক পাওয়া গেছে। তারা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের সংঘবদ্ধ চক্র। পিয়াসা বড় বাসা নিয়ে একাই থাকে। মৌর বাসা একই রকম। এসব বাসায় ধনী পরিবারের লোকজন এসে মাদক সেবন করে এবং ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে।”

গণমাধ্যমে এসেছে, অভিযানকালে পিয়াসার ঘরের টেবিল থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা, রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে ৯ বোতল বিদেশি মদ, ফ্রিজে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল এবং বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট পাওয়া গেছে। এছাড়া পিয়াসার কাছ থেকে ৪টি স্মার্টফোন জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এসবের পর অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এক টাকার কাবিনে বিয়ে করা পিয়াসা আসলে কয় টাকার মালিক? আর সেটা কিভাবে?

 

সূত্র: মানবজমিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button