টিকা নিতে পারবেন গর্ভবতী নারীরাও

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার টিকা বিষয়ক জাতীয় কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের করোনার টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় গর্ভবতী নারীদের টিকা দেওয়ার শর্তাবলীতে বলা হয়েছে, গর্ভবতী নারী টিকা গ্রহণের দিন অসুস্থ থাকলে তাকে কোডিড-১৯ টিকা প্রদান করা যাবে না। অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীকে কোডিড-১৯ টিকা প্রদান করা যাবে না। কোনও গর্ভবতী নারীর ভ্যাকসিন অ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে তাকে কোডিড-১৯ টিকা প্রদান করা যাবে না। কোনও গর্ভবতী নারী যদি কোডিড-১৯ ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ গ্রহণের পর এইএফআই কেস হিসাবে শনাক্ত হন তবে তাকে দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা যাবে না।

একইসঙ্গে নির্দেশনায় বলা হয় সম্মতিপত্রে টিকাগ্রহীতা/আইনানুগ অভিভাবক ও কাউন্সেলিং চিকিৎসকের স্বাক্ষর ব্যতীত টিকা প্রদান করা যাবে না।

নির্দেশনায় তিন নাম্বারে কাউন্সেলিং উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কোডিড-১৯ টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক গর্ভবতী নারীকে টিকা প্রদানের পূর্বে অবশ্যই নিম্নোক্ত তথ্যাদি একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অবহিত করতে হবে।

সেখানে গর্ভবতী নারীদেরকে গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে অবহিতকরণ নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান জন্মদান (অপরিণত নবজাতক) এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়:

(ক) নবজাতকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়,

(খ) বয়স্ক গর্ভবতী (৩৫ বছর), উচ্চ বিএমআই সম্পন্ন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত নারী গর্ভাবস্থায় (বিশেষ করে ১ম ও ২য় ট্রাইমেস্টার) কোডিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এবং

(গ) সাধারণ নারীদের তুলনায় গর্ভবতী নারীদের কোরিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশংকা অনেক বেশি।

গর্ভবতী নারীকে কোভিড-১৯ টিকার সুফল সম্পর্কে অবহিতকরণ প্রসঙ্গে বলা হয়, কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করলে কোডিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ও এর ফলে সৃষ্ট জটিলতার ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম গর্ভাবস্থায় কোডিড-১৯ টিকা গ্রহণ করলে কোডিড-১৯ এর গর্ভজনিত ঝুঁকিসমূহের সম্ভাবনা কম।

গর্ভাবস্থায় কোডিড-১৯ টিকার গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গর্ভবতী নারীদের কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের লাভ-ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য অপ্রতুল। অন্য যে কোন টিকার ন্যায় কোডিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রেও টিকা পরবর্তী বিরূপ প্রতিক্রিয়া নারীদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কিত কোনও তথ্য নেই।

নির্দেশনায় সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর গ্রহণ শীর্ষক অংশে বলা হয়েছে, উপরোক্ত_নির্দেশাবলী সম্পন্ন করার পর সম্মতিপত্রে (সংযুক্ত) গর্ভবতী নারী ও কাউন্সিলর (রেজিস্টার্ড চিকিৎসক) এর স্বাক্ষর গ্রহণ পূর্বক টিকা প্রদান করতে হবে।

একই নির্দেশনায় স্তন্যদানকারী নারীদের কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের পূর্বে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্তন্যদানকারী নারীগণকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতই বিদ্যমান নিয়মাবলী অনুসরণ করে টিকা প্রদান করতে হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২ আগস্ট অন্তঃসত্ত্বা এবং যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তাদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার সুপারিশ করে জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ) নাইট্যাগ।

নাইট্যাগের সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এটা করতে চায়, ওজিএসবি-ও (অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ হাসপাতাল) চায়। তাই আমরা সবকিছু বিবেচনা করে সম্মতি দিয়েছি দেওয়ার জন্য। এর আগে গত পরশু এ বিষয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে, সেখানেই সম্মতি দিয়েছি যে এটা করা যাবে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button