পলাতক আসামীর সঙ্গে থানায় ওসি’র মিটিং!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পলাতক এক আসামিকে গ্রেফতার না করে বরং তাকে সাথে নিয়েই ওসি’র অফিস কক্ষে দীর্ঘ সময় মিটিং করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবু বকর মিয়ার বিরুদ্ধে।
শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মর্তূজা মাহফুজ নামে পলাতক এক আসামীর সঙ্গে ওই মিটিং করে ওসি।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার পলাতক আসামী মর্তূজা মাহফুজ স্থানীয় পৌরসভার ভাদার্ত্তী গ্রামের সানাউল্লাসহ আরো কয়েজনকে নিয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি’র অফিস কক্ষে দীর্ঘ সময় অফিসার ইনচার্জ মো. আবু বকর মিয়ার সঙ্গে মিটিং করেছে।
জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট বুধবার রাতে স্থানীয় সামছুদ্দিন (৭০) বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় আবুল খায়ের সিরামিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কালীগঞ্জ শাখার উপ-ব্যাবস্থাপক ও ইনচার্জ মোঃ মর্তূজা মাহফুজকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ১৮ [৮] ১৮)। মামলায় মো: হোসেন(৩০), মো: ফারুক (৩৫), মো: মসিউরসহ (৪০) আবুল খায়ের সিরামিক্স কোম্পানিয় দায়িত্বরত অজ্ঞাত আরো প্রায় ২৫ জন নিরাপত্তা কর্মীকে আসামি করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে বেআইনী জনতাবদ্ধে লাঠিসোঠাসহ আক্রমন করে খুনের উদ্যেশ্যে মারপিট ও গুরুতর জখমসহ ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপরাধে পেনাল কোডের ১৮৬০ সালের ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩০৭/৫০৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওসি’র অফিস কক্ষে মিটিং এর বিষয়ে থানায় উপস্থিত মাসুদা নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী মোবাইল ফোনে বলেন, শনিবার দুপুরে আমার স্বামী আকবর এবং ভাসুর আলমগীরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এরপর আমিসহ আরও কয়েকজন থানায় যাই। সে সময় আবুল খায়ের গ্রুপের কর্মকর্তা মর্তুজা মাহফুজকে ছানাউল্লাহ সহ আরও কয়েকজন মিলে দীর্ঘসময় ওসির কক্ষে মিটিং করতে দেখেছি। পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার স্বামী এবং ভাসুরকে আবুল খায়ের গ্রুপের পক্ষে করা মামলায় আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মর্তুজা মাহফুজ স্থানীয় সামছুদ্দিন বাদী হয়ে আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী। বিষয়টি তখন তিনি ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকরর্তা এসআই আব্দুর রহমানকে জানান। কিন্তু মাহফুজকে গ্রেফতার করা হয়নি।
ওই সময় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, আকবর ও আলমগীরকে আটকের পর মর্তুজা দীর্ঘ সময় ওসি’র কক্ষে সানাউল্লাসহ আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মিটিং করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সানাউল্লা মোবাইল ফোনে জানান, আমি স্থানীয় এক কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে আকবর আর আলমগীরকে দেখতে থানায় গিয়েছিলাম। ওই সময় ওসি’র অফিস কক্ষে বসে মামলার বিষয়ে ওসি’র সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়াও মর্তুজা মাহফুজকে থানার আশেপাশে ঘুরতে দেখেছেন বলে তিনি জানান।
মর্তূজা মাহফুজের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী সামছুদ্দিনের মোবাইলে ফোন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছেলে বলেন, শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মর্তূজা মাহফুজ থানায় ওসির সঙ্গে মিটিং করেছে বলে শুনেছি। এছাড়া আমাদের করা মামালায় এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেফতার করছে না। বরং আসামিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে পুলিশ।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমানের মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, মর্তুজা মাহফুজ থানায় আসার বিষয়টি আমার জানা নেই। সে পলাতক রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আবুল খায়ের গ্রুপের করা মামলায় আকবর ও আলমগীরকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবু বকর মিয়ার কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মর্তুজা মাহফুজ শনিবার থানায় আসেনি। এ তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জানতে চাইলে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালীগঞ্জ সার্কেল) পংকজ দত্ত মোবাইল ফোনে বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, মর্তুজা মাহফুজ বাদী হয়ে দায়ের করা একটি মামলায় আকবর এবং আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও কথোপকথনের রেকর্ডিং / মোবাইল ফোনে নেওয়া সকলের বক্তব্যে আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…..
অবৈধভাবে জমি দখল করতে গ্রামবাসীর উপর আবুল খায়ের গ্রুপের হামলা, আহত ৪০(ভিডিও সহ)
জমি দখল করতে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর গভীর রাতে মামলা করলো আবুল খায়ের গ্রুপ
সংঘর্ষের ঘটনায় আবুল খায়ের গ্রুপের প্রায় ২৫ জনকে আসামী করে থানায় অভিযোগ
সংঘর্ষের ৫ দিন পর অবশেষে আবুল খায়ের গ্রুপের ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা