ঢাকার বাইরেও দেয়া হবে ফাইজারের টিকা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা এবার রাজধানীর বাইরের জেলা-উপজেলায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। নির্ধারণ করা হয়েছে টিকা রাখার সংরক্ষণাগার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো ফাইজার টিকা পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। তাপমাত্রা জটিলতার কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়েই টিকা কর্মসূচি শুরু হয়।

পরে ৩১ মে কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা দেশে আসে। এই টিকা সংরক্ষণ জটিলতায় শুধুমাত্র রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে দেয়া হয়। তবে এখন এই সংকট কেটে গেছে।

অতি নিম্ন তাপমাত্রার টিকা সংরক্ষণে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ২৬টি ফ্রিজার আসছে। তাই সরকার এবার ফাইজারের টিকা জেলা-উপজেলা পর্যায়েও নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী মাসে ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা দেশে আসবে। এই টিকা দেয়ার আগে নানা পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার পাশাপাশি এবার এই টিকা পাবেন জেলা-উপজেলার মানুষ।’

ফাইজারের টিকা জেলায় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ফাইজার মডার্নার টিকা সংরক্ষণের জন্য কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় অতি নিম্ন তাপমাত্রার ২৬টি ফ্রিজার পেয়েছি। এই ২৬টি ফ্রিজারে প্রায় ৯০ লাখ টিকা সংরক্ষণ করা যাবে। তাই এই টিকা সংরক্ষণের জটিলতা আর নেই।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক বলেন, ‘ফাইজারের টিকা জেলা-উপজেলায় দেয়ার জন্য আমাদের কাছে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রশিক্ষণও বুধবার শেষ হয়েছে।

‘মহাপরিচালক এ বিষয়ে নির্দেশনা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকাদান শুরু হবে। ফাইজারের আরও কিছু টিকা আসার কথা রয়েছে। সেগুলো আসলেই শুরু করা যাবে।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে চীনের টিকাগুলো জেলা-উপজেলা সব জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। ফাইজারের টিকা জেলা-উপজেলায় দেয়ার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাচ্ছি।’

টিকা দেশে আসলেও প্রয়োগে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে শামসুল হক বলেন, ‘ফাইজার টিকা সব জায়গায় সংরক্ষণ করা যায় না। অনেক সিলেকশন করে আমাদের এই টিকা নিয়ে যেতে হচ্ছে। সব টিকাকেন্দ্র এই টিকা নেয়া যাবে না। আবার ঢাকার বাইরেও এই টিকা নিতে চাচ্ছি।

‘টিকাকেন্দ্র নির্বাচন করা, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া অনেক জটিল বিষয়। জেলা-উপজেলায় এই টিকা সংক্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।’

মূলত ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ফ্রিজার দরকার হয়। এই ফ্রিজার পাওয়ায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় পাওয়া ফাইজার টিকা সংরক্ষণে অসুবিধা অনেকটাই দূর হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চার ধরনের টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। গোড়াতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। ধাপে ধাপে মডার্না, ফাইজার, সিনোফার্ম এসেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় প্লাস দুই ডিগ্রি থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব টিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা ও বিএসডিসি ওয়্যারহাউসে। এসব হাউসে সব মিলিয়ে তিন কোটি টিকা সংরক্ষণ সম্ভব।

মডার্নার টিকা মাইনাস ২৫ সেন্টিগ্রেডে রাখা হয়। তবে এটিকে একবার গলানোর পর দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সরক্ষণ করা যায় এক মাস পর্যন্ত। এ টিকা দেশে এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ সংরক্ষণ করা যাবে।

এছাড়া ফাইজার মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংগ্রহ করতে হয়। আর এটি গলানোর পর প্লাস দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সংরক্ষণ করা সম্ভব।

দেশে বর্তমানে এই টিকার ৩৫ লাখ ডোজ সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে। ২৬টি ফ্রিজার যোগ হওয়ার পর এই সক্ষমতা দাঁড়াবে ১ কোটি ২৫ লাখে ডোজে।

 

সূত্র: নিউজবাংলা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button