শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি: শিক্ষামন্ত্রী

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে ‘বাধ্য হয়েছে’।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে এক পর্যালোচনা সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, “গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খুরশিদ আলমের সাথে আমার কথা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গার হাসপাতালের চিত্র নিয়ে তিনি বলেন যে শিশুদের মধ্যে একটা সংক্রমণ ঘটছে।

“এটা তো আগে ছিল না। এটা তো সঙ্গে সঙ্গে আমলে নিতে হয়েছে। এর পরপরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়েছে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অভিহিত করি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সাথেও আমার কথা হয়।”

এভাবেই সিদ্ধান্তটি হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “মাঠের চিত্রের ওপর ভিত্তি করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আপাতত দুই সপ্তাহ আমরা সশরীরে ক্লাসে যেতে নিষেধ করেছি।”

এই সময়ে অনলাইনে ক্লাস চালু থাকবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। সংক্রমণ কমে এলে দেড় বছর পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবার শ্রেণিকক্ষ খুলে দেওয়া হয়।

এ বছরের শুরুতে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের খবর ‘না থাকায়’ ক্লাস বন্ধ না করার কথাই বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

পরে বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেলে শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফের বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা যেন বেড়ে না যায়, সে কারণে বাধ্য হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

সংক্রমণ হঠাৎ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় সবাই এক ধরনের শঙ্কায় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সে কারণেই এই সিদ্ধান্তটা নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি। আমরাও খুব খুশি মনে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কিন্তু পাঠদান বন্ধ ছিল না।

“ক্লাসে আসতে না পারায় শিক্ষার্থীদের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়নি, ক্লাস করতে পারেনি, এমন অনেক কষ্ট রয়েছে শিক্ষার্থীদের। আমরা সে কারণে বন্ধ করতে চাইনি। কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এইচএসসির ফলাফল প্রকাশে এর কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানান দীপু মনি।

“স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের টিকাদান অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষকরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস করবেন।,

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্বভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমাদের দিক থেকে আমরা বলব, মুখোমুখি ক্লাস হবে না। অনলাইনে তারা নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।

“আবাসিক শিক্ষার্থীরা কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে প্রয়োজনে আইসোলেশন সেন্টারে, হাসপাতালে বা যার যার বাড়িতে চলে যাব্নে। তারা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, আমি আশা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে হয় এই বিষয়টাতে একটু অবহেলা রয়েছে বলে আমি শুনেছি।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ৬১টি স্কুলে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা ৬১টি স্কুলে নতুন কারিকুলামের ওপর ট্রাই আউটে যাচ্ছি। তবে আমরা চেষ্টা করব অনলাইনে সেটা শুরু করা যায় কিনা। যদিও আমাদের এখানে অনেক গ্রুপ ওয়ার্ক- অ্যাক্টিভিটিজ আছে। তারপরে আমরা দেখি শুরু করা যায় কিনা।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button