দুদকের আবেদনে সেলিম খানের বিদেশ যাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও শাপলা মিডিয়া প্রযোজনা সংস্থার মালিক মো. সেলিম খানের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এ আদেশ দেন। আদেশে সেলিম খানকে ৬০ দিনের জন্য বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

আর আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) শাখায় চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে সোমবার কমিশনের অনুমোদনক্রমে সেলিম খানের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান।

অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তার স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তার পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তবে দুদকে তথ্য রয়েছে যে, সেলিম খানের মোট যে সম্পদ রয়েছে তার মূল্য ২০ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৮৫ টাকা। কিন্তু এ সম্পদের বৈধ কোনো উৎস ও রেকর্ডপত্র নেই।

দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সেলিম খানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে; চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৪.২১ একর কৃষি ও অকৃষি জমি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১০তলা বাড়ি, ঢাকার কাকরাইলে ৪তলা একটি বাড়ি ও কাকরাইলের একটি ফ্ল্যাট। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৪০ টাকা।

অন্যদিকে তার দুটি জিপ গাড়ি, চারটি ড্রেজার, একটি শটগান, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র রয়েছে; যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে ২ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৫ টাকাসহ তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।

এছাড়া তিনি ‘শাহেনশাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ‘প্রেম চোর’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ২ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ৬ থেকে ৭টি সিনেমা নির্মাণে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে বিভিন্ন নথিপত্রে উঠে এসেছে। এরও কোনো বৈধ উৎস এখনো পাননি দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

গত ৬ এপ্রিল দুর্নীতির মাধ্যমে অগাধ সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ এর নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। অভিযানকালে দুদকের টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে।

এরপর গত ২১ এপ্রিল দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এ বিষয় সাংবাদিকদের বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে এই মাসের প্রথমে চাঁদপুরে অভিযান চালায় দুদক এনফোর্সমেন্ট। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় সেটা আর হয়নি।

তিনি আরও বলেন, যদি তিনি সফল হতেন তাহলে সরকারের অতিরিক্ত ৩-৪ শত কোটি টাকা লোকসান হতো। কিন্তু সেটা হয়নি। এছাড়া মেঘনা-পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন তিনি। এনফোর্সমেন্ট টিম এই বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। পরবর্তীতে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জমি অধিগ্রহণকাণ্ডে শিক্ষামন্ত্রী ও তার পরিবার জড়িত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, এনফোর্সমেন্ট টিম জমি বেচাকেনা করে মূল্য বৃদ্ধি ও বালু উত্তোলনের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে। আরও যখন অনুসন্ধান হবে তখন কারা জড়িত বা কি বিষয় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলো আসবে।

সম্প্রতি প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাবিপ্রবি) জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষামন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় জমি কেনাবেচা করেন শিক্ষা মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয় ও তার ঘনিষ্ঠরা। তার বড় ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ৬ দলিলে ৯৯ শতাংশ জমি কেনেন। তার মামাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম এক একর ৬১ শতাংশ ও লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানও সেখানে কয়েক একর জমি কেনেন।

আরও জানা যায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৬২ একর জমি কেনার দরপত্র দেওয়া হয়। ওই মৌজায় জমির দাম ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা শতাংশ হলেও অধিগ্রহণে দাম ধরা হয় ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা করে। এভাবে বিভিন্ন শ্রেণির জমির অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এতে জমির মোট দাম আসে ৫৫৩ কোটি টাকা। কিন্তু ওই জমির প্রকৃত মূল্য ১৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাস্তবতা থেকে অন্তত ৩৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত লোপাটের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তাতে সম্মতি দেননি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button