কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যার মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শীতলক্ষ্যা নদীতে পানি কমে আসায় উভয় পাশে জেগে উঠেছে পলিমাটির চর। এ সুযোগে পাড়ঘেঁষে নদী থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে স্থানীয় একটি অসাধু চক্র। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তাদের আশঙ্কা, মাটি কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাড় ভেঙে ফসলি জমিসহ আশপাশের এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
২৪ এপ্রিল ২০১৯ বণিক বার্তা- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘শীতলক্ষ্যার মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ সকল তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়,স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদী কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরের মধ্যবর্তী টোক নামক স্থানে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উত্পত্তি হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে এলেও একেবারে শুকিয়ে যায় না। আবার বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লেও তা পাড় অতিক্রম করে না। এ কারণে কৃষকরা সারা বছরই নদীর পানি ব্যবহার করে পাড়সংলগ্ন জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করে থাকেন।
কয়েক দিন ধরে কিছু ব্যক্তি এক্সক্যাভেটর দিয়ে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের কুড়িয়াদী খেয়াঘাট এলাকায় নদীর মাটি কেটে নিচ্ছেন। ওই এলাকার আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কয়েকটি পয়েন্টে মাটি কাটা হচ্ছে। এ মাটি বিক্রি করা হচ্ছে এবিবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায়। আর এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন আবুল হায়াত নামে এক ব্যক্তি। তিনি সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফউদ্দিন আল-আমিনের ছোট ভাই।
বাদল মিয়া নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ভেকুর (এক্সক্যাভেটর) সাহায্যে প্রতিদিনই নদী থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, বিশেষ করে রাতে। পরে এ মাটি আশপাশের ইটভাটায় ট্রাকের সাহয্যে পৌঁছে দেয়া হয়। এতে নদীর যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে আশপাশের সড়ক।
আব্দুল আলী নামে এক কৃষক বলেন, শীতলক্ষ্যার পানি কখনো পাড়ের সীমানা অতিক্রম করে না। পানি শুকিয়ে এলে আমরা নদীর জমিতেই নানা ধরনের ফসল আবাদ করতাম। মাটি কেটে নেয়ায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে পাড় ভেঙে ফসলি জমিসহ আশপাশের এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এমনটি হলে আমাদের পথে বসতে হবে।
সিংহশ্রী গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসেম বলেন, যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে বর্ষায় পাড়ের জমিও নদীতে রূপান্তর হয়ে যাবে। কৃষকের জমি বাঁচাতে এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
ইটভাটায় নদীর মাটি ব্যবহারের বিষয়ে এবিবি ব্রিকসের মালিক অহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমরা সরাসরি নদী থেকে মাটি কাটি না। আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভাটার জন্য মাটি কিনে থাকি। এখানে মাটি সরবরাহ করছেন আবুল হায়াত।
সিংহশ্রী ইউপির চেয়ারম্যান আশরাফউদ্দিন আল-আমিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য হাজি আব্দুল ওয়াহেদ জানান, কয়েক দিন ধরে নদী থেকে মাটি কাটা হচ্ছে দেখে আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের বারণ করেছি। প্রয়োজনে প্রশাসনকেও অবহিত করব।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, সরকার নদী রক্ষায় বদ্ধপরিকর। প্রশাসনের চোখের আড়ালে কেউ যদি নদী থেকে মাটি কেটে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নদী থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম জানান, নদীর ভূমি থেকে মাটি কাটার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
নদীর মাটি কাটার বিষয়ে আবুল হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইটভাটার জন্য এখন আর তেমন মাটি পাওয়া যায় না। তাই কিছু মাটি নদীর পাশ থেকে নেয়া হয়েছে। আমরা জানতাম এসব জোত জমি, তাই মাটি কেটেছি। ভবিষ্যতে আর মাটি কাটব না।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে..
শীতলক্ষ্যার তীর কেটে ইটভাটায় মাটি বিক্রি: নীরব স্থানীয় প্রশাসন