প্লট বিক্রির টাকা ভাগাভাগির জেরে পূর্বাচলে খুন হয় ব্যবসায়ী মজিবর: পিবিআই

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্লট বিক্রির টাকার ভাগাভাগির জেরে কালীগঞ্জের পারাবর্থা এলাকায় পূর্বাচলের ২৫নং সেক্টরে জমি ব্যবসায়ী মজিবর রহমানের গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। প্রায় দেড় বছর পর হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রাসেল (৩৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার ও মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সফল হলো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্যা জানায় পিবিআই।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তার রাসেল ঢাকার খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। বুধবার (১৮ মে) রাত্র সাড়ে ৩টার দিকে তাকে পাতিরা এলাকা হতে গ্রেপ্তারে করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানায়, ভিকটিম মজিবর ও সে জমি ক্রয়-বিক্রির মিডিয়া হিসেবে কাজ করত। জনৈক নছু মিয়া তার মালিকানাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকার ২৩নং সেক্টরের ৪০৪ নং রোডের ৮নং প্লটটি বিক্রি করার জন্য মজিবরকে দায়িত্ব দেয়। পরে প্লটটি ভাল দামে বিক্রি জন্য মজিবর ও রাসেলসহ কয়েজন মিলে চূড়ান্তভাবে মূল্য নির্ধারন করে। ঐ প্লটটি বিক্রয় করে যে লভ্যাংশ হবে তার অংশরাসেলসহ অন্যরা মজিবরের দাবী করে। মজিবর যে টাকা লভ্যাংশ পাবে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে মজিবরের সাথে তাদের মনোমালিন্য হয়। পরে তারা মজিবরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরপর ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মজিবরকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে পূর্বাচল ২৫নং সেক্টরে গজারী বনের ভেতর গিয়ে সকলে এক সাথে মাদক সেবন করে। মাদক সেবনের পর তারা সকলে মিলে মজিবরের কপালে ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। সে সময় চিৎকার দিলে আসামীরা মজিবরের হাত ধরে বুকের উপর বসে পা ধরে এবং প্লাস দিয়ে পায়ের নখ উঠায়। এক পর্যায়ে মজিবরের গলা চেপে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পিবিআই’র গাজীপুর ইউনিটর পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান মামলাটির তদন্ত করে প্রায় দেড় বছর পর মজিবর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে।
পিবিআই’র গাজীপুর ইউনিটরের ইনচার্জ পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ঘটনাটি প্রায় দেড় বছর আগের। মামলার ভিকটিম মজিবরের বাড়ি খিলক্ষেত থানাধীন হলেও সে মূলত রাজউক পূর্বাচল এলাকার প্লট বিক্রয়ের মিডিয়া হিসেবে কাজ করত। ঘটনায় জড়িত আসামীরা মজিবরের মত একই কাজ করত। ঢাকার খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকায় নছু মিয়া নামে এক ব্যক্তির মালিকাধীন প্লট বিক্রির মিডিয়া হিসেবে মজিবর কাজ করে। ঘটনায় জড়িত আসামী রাসেল ও অন্যান্য আসামীরা ওই প্লট বিক্রয়ে সহায়তা করে। কিন্তু মজিবর প্লট বিক্রয়ের পর যে লভ্যাংশ পাবে তা অন্যদর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার আসামীসহ তার সহযোগীরা ঘটনার দিন ভিকটিমকে মোবাইল যোগে ডেকে এনে মাদক সেবন করার কথা বলে ঘটনাস্থল নির্জন গজারী বনে নিয়ে এসে প্লাস দিয়ে পায়ের নখ উঠায়। পায়ের নখ উঠানোর সময় ভিকটিম চিৎকার দিলে উক্ত আসামীরা তাকে গলা টিপে হত্যা করে। মূলত প্লট বিক্রয়ের লাভের টাকা ভাগাভাগি বিষয়ে বিরোধের জের ধরে ভিকটিম মজিবরকে আসামীরা নির্মমভাবে হত্যা করে।
গ্রেপ্তার রাসেসকে ১৮ মে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামীদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
উল্লেখ্য: ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর সকাল অনুমান ১১টার দিকে মজিবর রহমান ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ঐ দিন দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীর সাথে পারিবারিক বিষয়ে কথা বলে। পরবর্তীতে মজিবর রহমানের মোবাইল ফোনে তার পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরের দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে মজিবরের প্রতিবেশী স্থানীয় সাবেক ইউ.পি সদস্য নাঈম বেপারী ঘটনাস্থলের পার্শ্বের লোকজনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে মজিবর রহমানের স্ত্রীকে ফোন করে জানান কালীগঞ্জ থানাধীন পারাবর্থা এলাকায় পূর্বাচল ২৫নং সেক্টর ওয়ের্ষ্টান চত্তরের ৩-৪’শ গজ পশ্চিমে ৫৩নং গজারী বনের ভিতরে তার স্বামীর লাশ পড়ে আছে। পরে মজিবর রহমানের স্ত্রী রুমি বেগম বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে {মামলা নং-২০ (১২) ২০}।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশ প্রায় ৩ মাস তদন্ত করেও কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ সদর দপ্তর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল।
আরো জানতে…..
পূর্বাচলের ২৪ নং সেক্টরের গজারী বন থেকে জমি ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার