ভোটের আগে দল রেখে উড়াল দিচ্ছেন এরশাদ!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ভোটের আগে অসুস্থতা নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে এরশাদ সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট ধরবেন। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও তার সঙ্গে যাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন ক্ষমতা নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর হাতে দিলেও এরশাদ নিজের অবর্তমানে ‘চেয়ারম্যানের সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব’ পালনের দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছেন সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের হাতে।

সেক্ষেত্রে এরশাদের অনুপস্থিতিতে হাওলাদারই জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব পেলেন কি না- সে প্রশ্নের উত্তর দেননি মহাসচিব রাঙ্গাঁ।

‘রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায়’ অসুস্থ হয়ে পড়া এরশাদ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাওয়া আসা করছিলেন। কিন্তু তার অসুস্থতার বিষয়ে জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের।

২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন ভোটের আগে। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।

এবারও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘অসুস্থ’ এরশাদের সিএমএইচে ভর্তির খবর এলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

নানামুখি গুঞ্জনের মধ্যেই জাতীয় পার্টির জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মাসের শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘রাজনৈতিক‘ নয়; তিনি ‘সত্যিই’ অসুস্থ। তাকে দুই-এক দিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে।

কিন্তু জাতীয় পার্টির তখনকার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার তখন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘এমন কিছু নয়’। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশ কয়েকজন নেতা ‘মোটা টাকায়’ মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ তোলেন এরশাদ ও হাওলাদারের বিরুদ্ধে। হাওলাদার সে সময় তা অস্বীকার করেন।

ঋণ খেলাপের অভিযোগে পটুয়াখালী-১ আসনে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে অনেকটা আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। এরশাদের ‘সন্তানতুল্য’ এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে মহাসচিব করা হয় পার্টিতে ‘সরকারঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে।

গত সপ্তাহে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নতুন মহাসচিব রাঙ্গাঁ বলেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এরশাদ ‘ভয়ে থাকেন’। এ কারণে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।

“ঘুমের ডিস্টার্ব হলেও তিনি সিএমএইচে যান। বাসায় একা থাকেন বলে তার একলা লাগে, ভয় করে। তাছাড়া ইনফেকশনের ভয়ও আছে।”

নতুন মহাসচিব দাবি করেন, এরশাদ এখন ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট’ থাকলেও চিকিৎসার জন্য তার দেশের বাইরে যাওয়া জরুরি। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শেষ না করে তিনি দেশের বাইরে যেতে চান না। মহাজোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হলে ১০ ডিসেম্বরের পর হয়ত এরশাদ বিদেশে যেতে পারেন।

এরই মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর অল্প সময়ের জন্য বনানীতে দলের কার্যালয়ের সামনে এসে এরশাদ নেতাকর্মীদের বলেন, তার চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

কিন্তু এরশাদের ভাই দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৮৮ বছর বয়সে ‘যতটা’ সুস্থ থাকার কথা, ‘ততটা’ সুস্থ এরশাদ আছেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ‘ধূম্রজালের’ কোনো সুযোগ নেই।

“ডাক্তাররা যদি বলেন, এখানে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, তাহলে কেন তাকে নিয়ে যাব? তবে তারা যদি মনে করেন, এখানকার চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, উনাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হবে; তখন নিয়ে যাওয়া হবে। এটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠিত নই।”

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ২৯টি আসন পাওয়ায় ‘অসন্তুষ্ট’ জাতীয় পার্টি মাহজোটের বাইরে প্রায় দেড়শ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে।

তারা বলছেন, এত আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের জোট শরিক দলের প্রার্থীদের ভোটে ভাগ বসালে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে।

 

সূত্র: বিডিনিউজ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button