পার্টনারকে ঠকিয়ে হঠাৎ কোটিপতি পোশাক শ্রমিক, আদালতে মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি : পার্টনারকে ঠকিয়ে বিনা পূঁজিতে ব্যবসা করে হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া এক পোশাক শ্রমিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন তারই এক সহকর্মী। তারা উভয়ে মহানগরের টঙ্গীতে একই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে এক সময়ের এই দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু এখন চরম শত্রতে পরিণত হয়েছেন।

মামলার নথিপত্র ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন বড় দেওড়া মৃধা বাড়ির শামসুল হক মৃধা ও এলাকার ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ আলী স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সেই সুবাধে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এরই মধ্যে কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলে এ দুই বন্ধ বেকার হয়ে পড়েন। এর পর তারা যৌথভাবে নিটিং ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। শামসুল হক মৃধা জমি বিক্রি করে মূলধন হিসেবে ২৭ লাখ টাকা ব্যবসায় পূঁজি বিনিয়োগ করেন। ব্যবসায় অভিজ্ঞ মোহাম্মদ আলী মালামাল ক্রয়-বিক্রয়সহ সব কিছু দেখভাল করতেন। প্রথম অবস্থায় তারা যথারীতি লভ্যাংশ ভাগ করে নিতেন। এতে তাদের উভয়ের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু গত এপ্রিল মাসের পর থেকে কোনো লভ্যাংশ ও ব্যবসার হিসাব দিচ্ছিলেন না মোহাম্মদ আলী। শামসুল হক মৃধা ইতিমধ্যে পরস্পর জানতে পারেন, তার পার্টনার মোহাম্মদ আলী তাকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে স্থানীয় দেওড়া এলাকায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমিসহ একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন। টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে শাসুল হক মৃধার চোখ যেন চড়কগাছ। এর পর থেকে তিনি ব্যবসার হিসাব নিকাশ চাইলে মোহাম্মদ আলী আজ-না-কাল এভাবে কালক্ষেপন করছিলেন। অবশেষে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের চাপে গত ১ জুলাই বিচাল সালিশ হয়। সালিশে মোহাম্মদ আলী কৌশলে শামসুল হক মৃধার কাছ থেকে ব্যবসায়িক চুক্তিনামা দলিলটি টেনে নিয়ে হঠাৎ কল দিয়ে কেটে বাতিল করে ফেলেন। উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তিনি দলিলে বাতিল ‘ক্যানসেল’ লিখে স্বাক্ষর করে ফেরত দেন। এসময় সালিশে মোহাম্মদ আলী ব্যবসার লভাংশ বা আয়-ব্যায়ের হিসাব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও পরবর্তীতে আর কথা রাখেননি। এতে নিরুপায় হয়ে শামসুল হক মৃধা গত ২৯ আগস্ট গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় সিআর মামলা করে দেন (মামলা নং-৬০৫/২২)। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম।

শামসুল হক মৃধা অভিযোগ করে বলেন, মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি ও ভিত্তিহীন অভিযোগে থানা পুলিশ দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আফসোস করে বলেন, এক সময় মোহাম্মদ আলী নিয়মিত বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে পারতেন না, অনেক সময় ঘরে খাবার না থাকলে নিজের বাড়িতে নিয়ে খাওয়াতেন। বিগত ২০১৬ সালে তার সহযোগিতায় যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করার পর মোহাম্মদ আলীকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মোটা অংকের মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাকে জায়গা-জমি বিক্রি করিয়ে মোহাম্মদ আলী নিজেই এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। অথচ তার (শামসুল হক মৃধার) জায়গা জমি ব্যবহার করে তাকে সর্বস্বান্ত করে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিগত ২০১৬ সালে আমি ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ে। তখন নিজস্ব অফিস বা জায়গা না থাকায় শামসুল হক মৃধা তার বাড়ির ঠিকানায় আমাকে ট্রেড লাইসেন্স করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সে অনুযায়ী তার সাথে আমার একটি চুক্তি হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ট্রেডলাইসেন্স করতে গেলে তার বাড়ির প্ল্যান না থাকায় এবং হোল্ডিং কর বকেয়া থাকায় তিনি লাইসেন্স করতে ব্যর্থ হন। তখনই আমি ওই চুক্তিনামা দলিলটি কলম দিয়ে কেটে ও তাতে ক্যানসেল লিখে বাতিল করে দিই। তখন দলিলে কোনো সাক্ষীও ছিল না। পরবর্তীতে শামসুল হক মৃধা ওই বাতিল দলিলে সাক্ষী লিখে নিজেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অসৎভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে আমার নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দেয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button