হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ফারুক নন, ডিএমপি কমিশনার পদে আসছে নতুন মুখ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর খন্দকার গোলাম ফারুককে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার পদে আনা হচ্ছে বলে গুঞ্জন চললেও হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত হয় তাকে এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ডিএমপি কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটির জন্য নতুন মুখের সন্ধান চলছে।
এরই মধ্যে ঢাকার পুলিশ কমিশনার পদে তিন কর্মকর্তার নাম সরকারের শীর্ষ মহলে আলোচনা হচ্ছে। তারা হলেন—বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম, ১৫ ব্যাচের মাহবুবুর রহমান এবং ১৭ ব্যাচের মো. হাবিবুর রহমান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই তিন কর্মকর্তার মধ্য থেকেই যে কোনো একজন ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পাচ্ছেন। তাদের আগের কার্যক্রম নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে শেষ সময়ে অন্য কোনো কর্মকর্তার নামও যুক্ত হতে পারে এ তালিকায়।
পুলিশ কমিশনার পদে আগে থেকেই শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) হাবিবুর রহমানের নাম আলোচনায় ছিল। এই পদের জন্য নতুন করে আলোচনায় এসেছে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলামের নাম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ফাইলে স্বাক্ষর না করা পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা বলা যাবে না। এখনো তিনি স্বাক্ষর করেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কী করছি, কার ফাইল প্রেরণ করেছি, তা ফাইনাল না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। বর্তমান কমিশনারের মেয়াদ তো আরও কয়েক দিন রয়েছে। তা শেষ হলেই বলা যাবে, পরবর্তী কমিশনার কে হবেন।’
সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার গোলাম ফারুককে পরবর্তী ডিএমপি কমিশনার পদে নিয়োগ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। অনুমোদন পেলে গত বৃহস্পতিবারই তাকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন হওয়ার প্রস্তুতিও ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের। তবে সেই প্রস্তাবনা যাচাই শেষে অনুমোদন না দিয়ে নতুন তালিকা করে সারসংক্ষেপ পাঠাতে বলা হয়। এর পরই তিন কর্মকর্তাকে ঘিরে যাচাই-বাছাই শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধান্ত বদল না হলে খন্দকার গোলাম ফারুককে ডিএমপি কমিশনার পদে আনা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আজকালের মধ্যেই নতুন কর্মকর্তার সারসংক্ষেপ যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তা অনুমোদন হলে চলতি সপ্তাহে নতুন পুলিশ কমিশনার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন হতে পারে।
অবসরের পর গত বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামকে এক বছরের জন্য একই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। ২৯ অক্টোবর তার সেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার মধ্যে গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে তার স্থগিত হওয়া অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) মঞ্জুর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জননিরাপত্তা বিভাগ। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে তার এই ছুটি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়েই ডিএমপি কমিশনারের পদ শূন্য হবে।
অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল, কে হচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার? গত বুধবার শফিকুল ইসলামের পিআরএল প্রজ্ঞাপন জারির পর তা জোরেশোরেই শুরু হয়। আলোচনায় থাকা হাবিবুর রহমান ও মাহবুবুর রহমানকে ডিঙিয়ে আলোচনায় চলে আসে খন্দকার গোলাম ফারুকের নাম। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, তাকে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে অভিনন্দন জানান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের মধ্যে অনেক কর্মকর্তা আগেভাগে তাকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন।
‘ফারুক হচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার’—এমন শিরোনামে কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় প্রতিবেদনও হয়। তবে গত শুক্রবার এই কর্মকর্তা নিজের ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হিসেবে। সরকার এ বিষয়ে কোনো আদেশ জারি করেননি।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তরের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দল রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংস হতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যও রয়েছে, ২০১৩-১৪ সালের মতো নানা নাশকতাও করতে পারে। রাজধানীর ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের নাশকতা দমনে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকেই। এ জন্যই ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার কথা চিন্তা করে সে ধরনের কর্মকর্তাই এই পদে আসবেন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলিসম্পন্ন এবং বাহিনীর সদস্যরা যার নির্দেশনার প্রতি অনুগত থেকে দায়িত্ব পালন করবেন—এমন কর্মকর্তাই খোঁজা হচ্ছে ডিএমপি কমিশনার পদে।
সূত্র: কালবেলা