কর ফাঁকির অভিযোগে প্রাণের ১১ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে গ্রুপের ১১ প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এনবিআরের নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট গোয়েন্দা) সম্প্রতি এ সংক্রান্ত চিঠি বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে পাঠায়।
যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে : প্রাণ ফুডস লি., বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল লি., রংপুর ফাউন্ড্রি লি., রংপুর মেটাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি. (ট্রেডিং ইউনিট), রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ইউনিট-২), রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ইউনিট-৩), রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (কাঁচপুর ইউনিট), রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ভুলতা-১ ইউনিট), রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (ভুলতা-২ ইউনিট), প্রাণ আরএফএল প্লাস্টিক লি. এবং প্রাণ-আরএফএল এক্সপোর্ট লি.।
চিঠিতে বলা হয়, মূল্য সংযোজন কর আইন-১৯৯১ এর ধারা ২৬(ক)(২) অনুযায়ী রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত প্রাণ আরএফএল গ্রুপের কর্পোরেট সদর দফতর ‘প্রাণ আরএফএল সেন্টার’ নামক প্রতিষ্ঠানের ওপর তদন্ত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। ওই দল মূল্য সংযোজন কর ১৯৯১-এর ক্ষমতাবলে ২৬ ধারায় প্রতিষ্ঠানটিতে আকস্মিক পরিদর্শন করে। এ সময় জব্দ করা দলিলাদি প্রাথমিক যাচাই করে দেখা যায়, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের লেনদেন আপনার ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে আসছে। সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা এবং অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত আপনার ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেনের সব তথ্য দেয়ার অনুরোধ করা হল।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের মাসভিত্তিক ব্যাংকে কত টাকা জমা, উত্তোলন ও স্থিতি- তার হিসাব, চেক নম্বর ও তারিখ, চেক প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বর এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং ব্যাংকের শাখার নাম উল্লেখ করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বক্তব্য জানতে জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি জানে না বলে দাবি করে। পরে আরও কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে একযোগে অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা। কর ফাঁকির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কাগজপত্র ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়। অভিযানটি এনবিআরের টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে চালানো হয়। এ টাস্কফোর্স কর ফাঁকি বন্ধে কাজ করে থাকে। ভ্যাট গোয়েন্দার ৫ টিম নাটোর, নরসিংদী ও প্রাণের হেড অফিসে অভিযানে অংশ নেয়।
এনবিআরের সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের নিরীক্ষায় গত বছর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রায় ৪০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য বেরিয়ে আসে। কাঁচামাল আমদানির তথ্য গোপন, অনুমোদন ছাড়া রফতানি ও অবৈধভাবে রেয়াত নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ওই কর ফাঁকি দেয়। অভিযোগ রয়েছে, এভাবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে যুগান্তর ও যমুনা টিভি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর দ্রুত অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় ভ্যাট গোয়েন্দা।
এনবিআর সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে রয়েছে গ্রুপটির রংপুর মেটালের কারখানা। এখানে দুটি ইউনিটে বাইসাইকেল, টায়ার, রিম, স্পোক, ক্যাবলওয়্যার, এমএস পাইপ, জিআই পাইপ ও টিউব তৈরি করা হয়। এর মধ্যে একটি ইউনিটের বন্ড লাইসেন্স নেয়া আছে। অন্য ইউনিটের নেই। অথচ দুটি ইউনিট পণ্য উৎপাদনে একই কাঁচামাল ব্যবহার করে। রাজস্ব কর্মকর্তারা বিস্মিত হন- ইউনিট দুটোর আলাদা ব্যবসা নিবন্ধন নম্বর (বিআইএন) থাকলেও আয়কর অফিসে ইউনিট দুটোর টিআইএন একটিই, যা কোনোভাবে হওয়ার সুযোগ নেই। সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনকারী দুটি ইউনিট পাশাপাশি হওয়ায় রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা করেন তারা। সূত্র জানায়, নিরীক্ষার জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে রংপুর মেটালকে ৯ বার চিঠি দেয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত দলকে সহযোগিতা করেনি। পরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড (কাস্টমসের ডাটাবেজ সফটওয়্যার) থেকে আমদানি তথ্য ও কর অঞ্চল-৬ চিঠির মাধ্যমে বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ও আয়কর রিটার্ন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিরীক্ষা করা হয়।
আরো জানতে………
কালীগঞ্জে রেলওয়ের সাড়ে ৩ একর জমি প্রাণ আরএফএল’র দখলে!
ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগে আরএফএল গ্রুপের সদর দফতরে এনবিআর’র অভিযান