ঊর্ধ্বতনদের দুর্নীতির অভিযোগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পাঁচ হাজার টাকার অতিসাধারণ দুর্নীতির পেছনে জনগণের লাখ লাখ টাকা ব্যয় না করে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের তালিকায় ১ থেকে ২৫ নম্বরে থাকা (উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি) সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ থাকলে তা আগে অনুসন্ধান এবং তদন্ত করতে বলেছেন।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বুধবার এ রায় দেন।
শনিবার সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশেক মোমেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৫ হাজার টাকার ঘুস গ্রহণের মামলায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির টেকনিশিয়ান আব্দুর রহিমকে দেওয়া সাজার রায় বাতিল করে হাইকোর্ট এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে এটি এই আদালতের কাছে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, দুদক হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ৫শ/৫ হাজার টাকার অতিসাধারণ দুর্নীতির পেছনে জনগণের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছে। পত্রপত্রিকায় এটি দেখা যাচ্ছে যে, ৫ হাজার টাকার একটি মোকদ্দমার জন্য দুদকের ৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়। এখন জনগণের কষ্টের টাকা এই ৫ হাজার টাকার একজন দুর্নীতির প্রতিরোধের জন্য মামলা দায়ের থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা কতটুকু সমীচীন, প্রশ্ন রেখেছেন আদালত।
আদালত বলেন, যেখানে এটি পত্রপত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মাধ্যমে আমরা দেখি হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। সুতরাং দুর্নীতি দমন কমিশনকে এই মর্মে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে যে, আজ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন শুধু ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’-এর ১ থেকে ২৫ পর্যন্ত এই ধরনের সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগে শুধু অনুসন্ধান এবং তদন্ত করবেন। এরপর ব্যাংক পরিচালক, ব্যাংকের মালিক, ব্যাংকের এমডি, ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের সিইও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অনুসন্ধান এবং বড় আন্তর্জাতিক ত্রয়াদেশসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সবচেয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ হাজার হাজার কোটি টাকা যেখানে সম্পৃক্ত, সেসব মামলা-মোকদ্দমায় প্রথম বিবেচনায় আজ থেকে দুদক তদন্ত করবে। এছাড়া ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’-এর ১ থেকে সর্বশেষ এবং ওপরে নির্দেশিত ব্যাংক পরিচালকসহ এই যে, দুর্নীতি যখন সম্পূর্ণভাবে ওখানে আর কোনো অভিযোগ এবং দুর্নীতির কোনো আলামত পাওয়া না যাবে, তখন একমাত্র সেক্ষেত্রে দুদক এই ধরনের লোকের (ক্ষুদ্র কর্মচারী) বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা অনুসন্ধান গ্রহণ এবং দায়ের করবে। ওপরের নির্দেশনা দুদককে এখন থেকে অনুসরণ করতে হবে।
এছাড়া রায়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া উচিত। সরকারকে দ্রুততম সময়ে বিচার বিভাগে যে প্রক্রিয়ায় বিচারক নিয়োাগ হয়, সে প্রক্রিয়ায় দুদকের সব অফিসার নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে একটি নিয়মতান্ত্রিক ক্যাডার সার্ভিসে পরিণত করার পরামর্শ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্য হবেন আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের সুনাম এবং দক্ষতাসম্পন্ন সাবেক বিচারপতিতের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।
সূত্র: যুগান্তর