কালীগঞ্জে সন্তান ভূমিষ্টের পরেই উধাও, একদিন পর উদ্ধার: তদন্ত কমিটি গঠন!

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্মের কয়েক ঘণ্টার ভেতরেই হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রায় ২৪ ঘন্টা পর পুলিশি হস্তক্ষেপে শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং শিশুর স্বজনরা।

জানা গেছে, গত শনিবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই শিশুর জন্ম হয়। এর কয়েক ঘন্টা পরেই গায়ের হয়ে যায় ওই শিশু। এরপর কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে নিখোঁজের প্রায় ২৪ ঘন্টা পর রোববার (৮ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে ওই ঘটনা তদন্তের জন্য সোমবার (৯ জানুয়ারি) তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ওই শিশুটি তুমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া এলাকার বাবুল রোজারিও এবং ববিতা রোজারিও মেয়ে।

শিশুর স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশনের পূর্বেই শিশুকে বিক্রির পরিকল্পনা করে রেখেছিল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ওটি ইনচার্জ বিউটি খন্দকার পাতা ও তুমুলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য কর্মী সন্ধ্যা দাস। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই টার্গেট করা হয় শিশুর পিতা মাদকাসক্ত বাবুল রোজারিওকে। জন্মের পর ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার শিশুকে কিনে নেন নার্স পাতা। আর এতে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য কর্মী সন্ধ্যা দাস।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বলছে, শিশুর পিতা মাদকাসক্ত। তাই সে তার সন্তানকে বিক্রির জন্য চুরি করেছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নার্স পাতা ও সন্ধ্যা এ ঘটনায় জড়িত না।

তুমুলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সাগর রোজারিও এবং শিশুর স্বজনরা বলেন, শনিবার ববিতা রোজারিওর মেয়ে শিশুর জন্ম দেয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালের নার্স পাতা স্বাস্থ্য কর্মী সন্ধ্যার সহায়তায় হাসপাতাল থেকে ওই শিশুকে গায়েব করে ফেলে। এরপর থেকেই শিশুর পিতা বাবুল রোজারিও’ও পালিয়ে যায়। রোববার সকালে হাসপাতালে শিশুর সন্ধান না পেয়ে খোঁজাখুঁজির শুরু হয়। সে সময় শিশুর মা ববিতা রোজারিও চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে নার্স পাতা বলে শিশুকে পেতে হলে তাকে এক লাখ টাকা দিতে হবে। কারণ হিসেবে পাতা জানায় বাবুল রোজারিও তার সন্তানকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। শিশুকে ফিরিয়ে দিতে পাতাকে অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়ে রোববার বিকেলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শিশুর দাদী সন্ধ্যা গমেজ। পরে পুলিশ পাতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর রাত ৯টার দিকে পাতার পরিচিত এক নারী শিশুকে থানায় নিয়ে আসে। পরে মধ্যরাতে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তার মায়ের কাছে শিশুকে বুঝিয়ে দিয়ে আসে।

অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি খন্দকার পাতা বলেন, শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ববিতা রোজারিও’র সিজারিয়ান অপারেশনের চলে। বিকেল পাঁচটার দিকে সে কন্যা সন্তান প্রসব করে। পরবর্তীতে যথারিতি মা ও শিশুকে তাদের নির্দিষ্ট বেডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। অপারেশন শেষে আমি বাসায় চলে আসি‌। পরদিন জানতে পারি ওই শিশুর পিতা তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে।‌ এরপর থেকেই লোকজন আমাকে দোষারোপ করছে। আমি ঘটনার সাথে জড়িত নয়, তবু আমাকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।‌ পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শিশুর পিতা বাবুল রোজারিও মাদকাসক্ত তাই সে নিজেই তার সন্তানকে হয়তো বিক্রি করে দিয়েছিল। আমি শিশুকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কারো কাছে টাকা চাইনি। এসব মিথ্যা অভিযোগ।

অপর অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মী সন্ধ্যা দাশকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান তালুকদার বলেন, রোববার বিকেলে অভিযোগ পেয়ে বাবুল রোজারিওকে ফোন‌ করে নিখোঁজ শিশুকে থানায় নিয়ে আসতে বলা হয়। রাত ৯টার দিকে তিনি শিশুকে নিয়ে থানায় আসেন। পরে বাবুল রোজারিও’র কাছ থেকে শিশুকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাবুল রোজারিও মাদকাসক্ত। তাই সে হয়তো কোন কারণে শিশুকে লুকিয়ে রেখেছিল।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এস এম মনজুর-এ-এলাহী বলেন, শনিবার ওই প্রসূতি অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান প্রসব করে। নিয়ম অনুযায়ী অপারেশনের পর ওই শিশুকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে কোন এক সময়ে গোপনে হাসপাতাল থেকে ওই শিশুকে চুরি করে নিয়ে অজ্ঞাত‌ কোথাও লুকিয়ে রাখে।‌ পরে পুলিশ ওই শিশুকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। মা ও সন্তান দু’জনেই এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুর পিতা মাদকাসক্ত। তাই তিনি হয়তো কোন কারণে শিশুকে সরিয়ে রেখেছিলেন। এই ঘটনায় সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি খন্দকার পাতাসহ হাসপাতালের কেউ জড়িত নয়। ঘটনা তদন্তে হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

 

আরো জানতে…..

কালীগঞ্জে ‘অ্যানেস্থেসিয়া’ চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান, প্রসূতির মৃত্যু: ছাড়পত্রে জালিয়াতি!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button