দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ঘিরে প্রতিযোগিতা, রূপ নিতে পারে প্রতিহিংসায়!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এতে আগামী দিনে তৃণমূলে কেথাও কোথাও ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব-সংকট এবং কোন্দল বাড়তে পারে, নেতাকর্মীরাও হয়ে পড়তে পারেন দ্বিধাবিভক্ত। আর তখন এই প্রতিযোগিতা প্রতিহিংসায় রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক। সাংগঠনিকভাবে এখন থেকেই লাগাম টানতে না পারলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে প্রকাশ্য বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাই শিগশিগরই এ বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করে তৃণমূলকে কঠোর বার্তা দেওয়া হবে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, টানা মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এতে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য বা তাদের পরিবারের সদস্য বা মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা মাঠ পর্যায়ে নানামুখী প্রতিযোগিতা শুরু করবে- এটাই স্বাভাবিক। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন একটি দলে এটা হওয়াই স্বাভাবিক। দলের ভেতর প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা যাতে কোনভাবেই প্রতিহিংসায় রূপ নিতে পারে সেটা মোকাবিলা করাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, দলের অনেক নেতা-এমপি ভুলে গেছেন যে, সমষ্টিগতভাবে বহুসংখ্যক মানুষকে নিয়ে দল করতে হয়। এদের কেউ কেউ দলে নিজে একনায়কত্ববাদ সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। কোনো দল এক জনকে নিয়ে হয় না। কিন্তু যারা এসব করছেন, তাদের খেয়াল রাখা উচিত, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে দল থেকে যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন এবং যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের একটি বড় অংশ কিন্তু পরিবারের সদস্যদের বাইরে।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নেত্রী কিন্তু কঠিন বার্তা দিচ্ছেন। আগামী দিনে যারা সৎ, যোগ্য এবং দলের জন্য নিবেদিত ও পরীক্ষিত তাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে যেসব জেলায় আমরা বর্ধিত সভা করেছি সেখানে নেত্রীর পক্ষে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এবং এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি চলমান রয়েছে। সামনের দিকে তা আরও দৃশ্যমান হবে।

শীর্ষ নেতারা বলছেন, টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় সারাদেশে স্থানীয় এমপি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এই প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়- সেটাই আমাদের ভাবনার বিষয়। তবে আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যে, ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা’ ও ‘নৌকা’র স্বার্থে সবসময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘দলে আধিপত্য বিস্তার বা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুভ লক্ষণ নয়। এক জনকে নিয়ে কোনো দল না। সমষ্টিগতভাবে বহুসংখ্যক মানুষকে নিয়েই দল। সেই দলকে কুক্ষিগত করার বা একনায়কত্ববাদ সৃষ্টির সুযোগ কারও নেই। আমরা বলতে পারি যে, সাম্প্রতিক মনোনয়নগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে, মাননীয় নেত্রী কিন্তু কঠিন বার্তা দিচ্ছেন। যারা সৎ, যোগ্য এবং দলের নিবেদিতপ্রাণ এবং অগ্নিপরীক্ষায় পরীক্ষিত; তারাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকারী কোনো কিছুকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার থেকে পাওয়া আর না পাওয়ার বিষয় না। কোনো নেতার পরিবারের লোক হয়েও যদি তিনি রাজনীতি না করেন তাহলে তার মনোনয়ন পাওয়াটা ঠিক নয়। কেই কারও সন্তান হিসেবে অংশীদারিত্বের দায়িত্ব পেতে পারেন না। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। রাজনীতি অবশ্যই করতে পারে। রাজনীতি করেই নিজের স্থানটি নির্ধারণ করে নিতে হবে। এখানে কোনো সন্তান বা ভাইয়ের সুযোগ নাই। সেই কঠিন বার্তা ইতোমধ্যেই মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন।’

নানক বলেন, ‘দলের নেতৃত্বে এমন মানুষদের থাকতে হবে যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। নির্বাচন হলো এমন একটি বিষয় যে, এক জন প্রার্থীকে জনগণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। ভালো নেতাকে এখনও মানুষ গ্রহণ করে। সৎ মানুষকে এখনও মানুষ গ্রহণ করে। সেটি প্রমাণিত সত্য। কাজেই আমরা দলকে ঢেলে সাজাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই নেত্রীর বার্তা বুঝতে পেরেছি। বার্তা বুঝে সেই অনুসারে আমরা রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করব।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগে আদর্শহীনদের জায়গা আছে বলে মনে করি না। আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য কেউ না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা-ই হলেন অপরিহার্য। তার বাইরে কাউকে অপরিহার্য ভাবার বা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। দলের শৃঙ্খলা, নীতি আদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার আওয়ামী লীগ কাউকে দেয়নি। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দিয়েছেন, এ ধরনের রেকর্ড নাই। পাপ করলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে।’

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচন খুব চ্যালেঞ্জিং হবে। এটা আমরা বুঝতে পারছি। সে কারণে নেত্রী হিসাব-নিকাশ করেই নমিনেশন দিবেন। এলাকার মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, যারা বিতর্কের ঊর্ধ্বে তারাই মনোনয়ন পাবেন।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button