দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জরিপে কালো তালিকায় ৮৭ এমপি, শেষ সুযোগ তিন মাস

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করছে। প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে সারাদেশে একের পর এক জরিপ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। সেই জরিপ থেকে অন্তত একশ জন প্রার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এই সব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন অপরিহার্য বলেও জরিপগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে উঠে এসেছে। এদের মধ্যে থেকে কয়েকজন যে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না, সেটি মোটামুটি নিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বদলে ভিন্ন প্রার্থীদের নির্বাচন প্রচারাভিযান এবং এলাকা গোছানোর জন্য দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আর ৮৭ জন এমপিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যারা আগামী তিন মাস অর্থাৎ ঈদ পর্যন্ত সময় পাবেন এবং এই ঈদের মধ্যেই যদি তারা এলাকা গোছাতে না পারেন, তাহলে তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না।
অন্তত আওয়ামী লীগের ২৭ জন এমপি নিশ্চিত যে, আগামী নির্বাচনে তারা মনোনয়ন পাচ্ছেন না। বিভিন্নভাবে তাদেরকে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ফরিদপুর আসনের একজন সাবেক প্রভাবশালী নেতা আগামী নির্বাচনে নিজ থেকেই অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি এখন সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন। এক সময় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী, পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা আওয়ামী লীগের সব কমিটি থেকেই বাদ পড়েছেন। এমনকি সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ থেকেও তাকে সম্প্রতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ এমপিদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ থেকে আরেকজন এমপি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তার আসনে কে প্রার্থী হবেন, সেটি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে ঢাকার একটি আসনে অভিযুক্ত একজন দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তার বদলে তার ছেলে বা অন্য কেউ মনোনয়ন পাবে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণাঞ্চলে একজন আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে, সেজন্য তাকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তিনিও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এভাবে প্রথম তালিকা তৈরি করা হয়েছে- যারা আগামী নির্বাচনে আর কোনো অবস্থাতেই মনোনয়ন পাবেন না। এটি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তাদের বদলে বিকল্প প্রার্থীদেরকে, নতুন প্রার্থীদেরকে মাঠে নামারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা সম্ভাব্য নতুন প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই নতুন প্রার্থীদেরকে এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করার কথা বলেছেন। এর বাইরেও ৮৭ জন এমপিকে পাওয়া গেছে, যাদের অবস্থা খুব সুবিধাজনক নয়। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে তাদের জন্য বিজয় কষ্টসাধ্য এবং প্রায় অসম্ভব। এরকম প্রার্থীদের তালিকাও আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত করেছে। এদেরকে বিভিন্নভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি তারা শেষ পর্যন্ত আগামী তিন মাসের মধ্যে এলাকায় পরিস্থিতি উন্নতি করতে না পারে এবং দৃশ্যমানভাবে নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তাদেরকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চমক আনবে এবং এই চমকে এমন সব প্রার্থী দেওয়া হবে- যারা জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, এলাকায় যাদের সুনাম রয়েছে এবং ইমেজ ভালো। প্রার্থী দিয়ে আগামী নির্বাচন বাজিমাত করবে আওয়ামী লীগ- এমন কথাই বলছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই।