নৈতিকস্খলন ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড: এসপি ফারুকীকে সাময়িক বরখাস্ত

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নৈতিকস্খলন, বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এসপি পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বহিষ্কৃত কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী। বরখাস্ত হওয়ার সময় তিনি রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া পিএসটিএস-এ দায়িত্বরত ছিলেন।
বুধবার (১ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া পিএসটিএসে দায়িত্বরত ও সাপ্লাই পুলিশ সদর দফতরের সাবেক এআইজি মো. মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড, নৈতিকস্খলন, শিষ্টাচার বহির্ভূত কার্যকলাপ এবং অসদাচরণের অভিযোগের মাত্রা ও প্রকৃতি বিবেচনায় তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১২(১) অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
সাময়িক বরখাস্তের সময় তিনি পুলিশ অধিদফতর ঢাকায় সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।
উল্লেখ্য: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে তার সাবেক স্ত্রী আয়শা ইসলাম বাদী হয়ে গত বছর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই নালিশি মামলা করেছিলেন।
ওই মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১৯ সালে মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে ফেসবুকে আয়শার পরিচয় হয়। সম্পর্কের প্রথম থেকে আয়শা ইসলামকে দেখা করতে প্রলুব্ধ করেন ফারুকী। এরপর তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আয়শার বাসায় যাতায়াত করেন। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আয়শাকে বিয়ে করতে চান তিনি। পরে আয়শার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে আয়শা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।
২০২০ সালের ১৮ মার্চ ফারুকী চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, আয়শাকে ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানোর কথা বলে গর্ভপাত করানোর ওষুধ খাইয়ে দেন বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওষুধটি গর্ভপাতের ছিল বলে ফারুকী পরে আয়শার কাছে স্বীকার করেন। এ সময় আয়শা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান ফারুকী। সেখানে গর্ভপাত করার সময় স্বামীর নামের স্থলে ফারুকী সই করেন। কিন্তু গর্ভপাতে আয়শার সম্মতি ছিল না।
আরজিতে আরও বলা হয়, গর্ভপাতের পর ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন আয়শা। তবে পরে ফারুকী কৌশলে তাঁর সঙ্গে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং সহকর্মীদের কাছে আয়শাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আয়শাকে বিয়ে করার কথা বলে চাপের মুখে তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন। গত বছরের ১৬ এপ্রিল আয়শা জানতে পারেন, তিনি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় ফারুকী আবারও আয়শার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেন।
ভ্রূণ হত্যা করতে না দেওয়ায় ফারুকী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং আয়শা ও গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার আরজিতে। এতে আরও বলা হয়েছে, আয়শা আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে ফারুকী বিয়ে করতে সম্মত হন। শেষমেশ গত বছরের ৬ জুন মুসলিম শরিয়াহ আইন অনুযায়ী আয়শাকে বিয়ে করেন।
এরপর আয়শার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান তিনি। গর্ভের সন্তানকেও হত্যার চেষ্টা করেন ফারুকী। ওই বছরের ২৫ আগস্ট আয়শা নিজের ও গর্ভের সন্তানের জীবন রক্ষার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে আবেদন করেন। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আবেদন করেন।
এর আগেই আয়শাকে তালাক দেন ফারুকী। গত বছরের ২৩ নভেম্বর আয়শা কন্যাসন্তান জন্ম দেন। সন্তানের ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে পৃথক একটি মামলা করেছেন আয়শা।
আরো জানতে……..
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ফারুকীর বিরুদ্ধে ‘ভ্রূণ হত্যার মামলা’ করেছে সাবেক স্ত্রী