কালীগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ তাঁর পরিবারের চারজনের উপর হামলা: থানায় মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ তাঁর পরিবারের চারজনের উপর হামলা এবং ছেলের দোকানে ভাঙচুর করে অর্থ লুটের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
সোমবার ( ২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন {মামলা নম্বর-১৯(৪)২৩}।
অভিযুক্তরা হলো, বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর গ্রামের কাদিরের ছেলে নাজমুল (৩০) ও মঞ্জুর (২৫), বাশাইর গ্রামের মুরাদ শিকদারের রং ছেলে রিফাত (১৯) এবং গৌতম গোপের ছেলে কেটু গোপ (২০)। এছাড়াও অজ্ঞতা আরো ১২ জন।
মামলার বাদী আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বাশাইর গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়া (৭৬)। এছাড়াও হামলায় আহত হয়েছেন তাঁর ছেলে আল-আমিন রিপন (৩৩), মেয়ের স্বামী ইকবাল ফাহাদ (৩৯) এবং ছেলের শ্যালক রাকিব (২৩)। তারা সকলেই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তাঁর ছেলে আল-আমিন রিপন প্রাণ কোম্পানির ডিলার (পাইকারি ব্যবসায়ী)। ঈদ উপলক্ষে রিপনের শ্যালক রাকিব চাঁদপুর থেকে তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। গত ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাকিব বাড়ির পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলো। সে সময় অভিযুক্তরা রাকিবকে অন্য এলাকার লোক ভেবে কেন ওই স্থানে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে এই বিষয়ে জানতে চায় এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে বলে। সে সময় রাকিব তার অপরাধ কি এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাকে মারধর শুরু করে অভিযুক্তরা। পরে তার কান্নার শব্দ পেয়ে দোকান থেকে রিপন বের হয়ে ঘটনার বিস্তারিত শুনে অভিযুক্তদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারাসহ অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র দা, ছেন, লোহার রড ও লাঠিসোঠা নিয়ে বাশাইর বাজারে থাকা রিপনের দোকানে প্রবেশ করে মালামাল ভাংচুর করে আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্ষতি করে। সে সময় রাকিব তাদের বাঁধা দিলে অভিযুক্তরা তাকেও মারধর করতে থাকে। পরে তার ডাক-চিৎকারে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের জামাই ইকবাল ফাহাদ ঘটনাস্থলে গেলে তার উপরেও হামলা চালায় অভিযুক্তরা। এক পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মিয়া এগিয়ে গিয়ে অভিযুক্তদের শান্ত করার চেষ্টা করলে তাঁকেও এলোপাথারী কিল-ঘুষি ও লাথি মারে তারা। হামলায় তারা সকলে আহত হয়। পরে দোকানের বক্সে থাকা নগদ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা লুট করে অভিযুক্ত নাজমুল। সে সময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয়রা।
কালীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার উপরে হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঘটনার পর থেকেই আহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আইনি সহায়তা পেতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে আব্দুল লতিফ মিয়াকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। সোমবার সন্ধ্যায় আমিসহ আরো মুক্তিযোদ্ধারা থানায় উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের এবং আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ আশ্বস্ত করেছে যতদ্রুত সম্ভব আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার উপরে হামলার ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলের ইন্ধন রয়েছে। আসামিরা সকলেই তার সহযোগী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হক বলেন, ঘটনার দিন নিয়মিত ডিউটি পালন শেষে ওই এলাকা হয়ে থানায় ফেরার পথে ওই স্থানে লোকজনের ভিড় দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করলে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।