ইউএনও কার্যালয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে কলেজ শিক্ষিকা, ইউএনও ওএসডি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম আড়াই বছর আগে তাঁকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করছেন দিনাজপুরের এক কলেজ শিক্ষিকা। জিনাত আরা নামে ওই নারী আরিফুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী থাকার কথা জানতে পেরে গত বুধবার বিকেলে সন্তান নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে হাজির হন। তবে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা তাঁকে ইউএনওর কক্ষে ঢুকতে বাধা দেন। তখন তিনি সন্তান নিয়ে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে বসে পড়েন।

এ ঘটনায় ওই ইউএনও আরিফুল ইসলামকে ওএসডি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইউএনও মো. আরিফুল ইসলামকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) পদে নিয়োগ করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী সংবাদ মাধ্যমকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

জিনাত আরার দাবি, আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুল ইসলাম দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকাকালে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ২০ লাখ ১০১ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তাঁদের বিয়ে হয়। তিনি প্রথম স্ত্রী থাকার কথা জানতেন না। বিয়ের কাবিননামায় প্রথম স্ত্রী থাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি।

ইউএনও অবশ্য এই নারীকে বিয়ে করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পরে তালাক দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।

ইউএনওর স্ত্রী দাবি করা এই নারীর অভিযোগ, বিয়ের পর তাঁদের সংসারে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। সাপ্তাহিক ছুটিতে আরিফুল দিনাজপুরের বাসায় গিয়ে থাকতেন। পাঁচ-ছয় দিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তিনি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।

জিনাত আরা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে বুধবার দুপুরে আক্কেলপুরে এসে আমার স্বামী ইউএনও মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। আমার স্বামী তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে আমাদের দুটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। তাঁরা আমাকে সেখান থেকে বের করে দেন। এর প্রতিবাদে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কের এসে বসে পড়ি। পরে আমাকে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান, আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র, আক্কেলপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আমার কথা শোনেন। এরপর সন্ধ্যায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমাকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে থাকতে চাই। আমার আগে একটি সংসার ছিল। আমি ইউএনওর সংসার করব।’

জিনাত আরার ভাই মুক্তার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আরিফুল ইসলাম আমার বোনকে গোপনে বিয়ে করেন। আমার বোন শিশুসন্তানসহ স্বামীর কাছে আসেন। কিন্তু ইউএনও তাঁর নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে আমাদের হেনস্তা করেন।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন্দ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছিলাম। ইউএনও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। তালাকনামা আমরা দেখেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা এর একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করছি।’

যোগাযোগ করা হলে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাকে ব্ল্যাকমেল করে ট্র্যাপে ফেলে বিয়ে করেছিল মেয়েটি। বিয়ের পর সে আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিল। আরও টাকা নিতেই পরিকল্পিতভাবে কিছু লোকজন নিয়ে আক্কেলপুরে এসেছিল আমাকে সমাজের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করতে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘আমি তাকে অসম্মান করিনি। বরং সে-ই আমাকে হেনস্তা করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকে তালাক দিয়েছি। আমি বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করব।’

আক্কেলপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাদেকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম বিয়ে গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে অপরাধের শামিল। একজন ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকও। যদি তিনি নিজেই অপরাধ করেন, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচার করবেন কীভাবে? এ ঘটনার পর এখানে ইউএনও হিসেবে থাকা তাঁর সমীচীন হবে বলে মনে করি না। এ ঘটনায় এলাকার ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আক্কেলপুরের ইউএনওর ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যেহেতু এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয়। তবু লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

সূত্র : আজকের পত্রিকা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button