অপরাধের সাম্রাজ্য: চার হাজার কোটির সরকারি জমি সেই কামরুলের পেটে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রহস্যময় মো. কামরুজ্জামান কামরুল ওরফে মাউচ্ছা কামরুল। কালবেলার সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে পাঠকরা জেনে গেছেন যে, এক সময় বাজারে মাছ বিক্রি করলেও জমি-খাল দখল করে এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। গাজীপুরে হত্যা, জমি দখল, জলাশয়-খাল-বিল ভরাটসহ ভূরিভূরি অপরাধ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি।

১৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক কালবেলা- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘চার হাজার কোটির সরকারি জমি সেই কামরুলের পেটে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার অবৈধ সাম্রাজ্য নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি ‘জমি-খাল গিলে খান রহস্যময় কামরুল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের অনুসন্ধানের সূত্র ধরেই কামরুলের চমকে যাওয়ার মতো আরও তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কামরুল শুধু সাধারণ মানুষের জমিই দখল করেননি; সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত প্রায় ৪০০ একর জমি এখন তার পেটের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের আদালতে মামলা করলেও ৫ বছর ধরে সেই মামলা ঝুলে আছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে। এই কামরুল পরিবেশ আইনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে আদালতকে ‘মিসগাইড’ করে উচ্চ আদালতে দায়ের করেছেন রিট। ফলে মামলায় আসে স্থগিতাদেশ। আর এই সুযোগে আশপাশের কৃষিজমি, খাল-বিল-জলাশয় দখল এবং ভরাট করে বিস্তৃত করছেন তার সাম্রাজ্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কামরুলের টঙ্গী এবং উত্তরায় রয়েছে একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট। নিজের পরিবার নিয়ে থাকেন টঙ্গীর সাতাইশে ৬ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা আলিশান বাড়িতে। চড়েন দামি গাড়িতে। তার এই রাজকীয় জীবনযাপনের নেপথ্যে রয়েছে অগণিত মানুষের নিঃস্ব হওয়ার গল্প। এই ভয়ংকর ভূমিদস্যু কামরুলের হাত থেকে বাদ পড়েনি সরকারি খাসজমি, জলাশয়, বিল এমনকি স্থানীয় ঈদগাহ মাঠও। এসব দখল করে বানিয়েছেন হাউজিং প্রকল্প, গড়েছেন শিল্পকারখানা। এ ছাড়া অদৃশ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন গাজীপুরের রাজনীতিও। সরকারি বড় কর্মকর্তা থেকে রাজনীতিবিদরাও নিয়মিত হাজিরা দেন তার দরবারে।

জানা যায়, টঙ্গীর সাতাইশ, দারাইল ও গুশুলিয়া মৌজায় ছায়াকুঞ্জ-৫ এবং ছায়াকুঞ্জ-৬ আবাসিক প্রকল্পের নামে কামরুল দখল করেছেন ৪০০ একর সরকারি খাসজমি, ভরাট করেছেন একাধিক জলাশয় ও বিল। টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় প্রতি শতাংশ জমির বর্তমান দাম ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি শতাংশ জমির দাম ১০ লাখ টাকা করে ধরলেও ৪০০ একর বা ৪০ হাজার শতাংশ জমির দাম প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। পরিবর্তন করেছেন জমির শ্রেণি। দখলের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় কামরুল ও ছায়াকুঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদ রেজার বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই মামলায় তারা কয়েক মাস জেলও খেটেছেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন কামরুল। শুনানি শেষে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। এরপর ধাপে ধাপে বাড়াতে থাকেন স্থগিতাদেশের মেয়াদ। এভাবে দীর্ঘ ৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে ঝুলে আছে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটি। আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন কামরুল। আর উচ্চ আদালতের রুল নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলাটির ফয়সালা হচ্ছে না গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিতে চাতুরি করেছেন এই কামরুল। পরিবেশ আদালত আইন-২০১০ প্রণীত হওয়ার পরও তিনি ‘পরিবেশ আদালত আইন-২০০০’ এ রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। পিটিশনে তিনি আদালতের অভিযোগ গঠনের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেন। পিটিশনে দাবি করেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের চার্জ গঠনেরই কোনো এখতিয়ার নেই। রিটে বিবাদী করা হয় আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শককে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ জারি করেন আদালত। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, পরিবেশ আইন-২০১০ প্রণীত হওয়ার পরে পুরোনো আইনটি বাতিল হয়ে গেছে। তাই পুরোনো আইনে পিটিশন দায়েরের সুযোগ নেই। আর পরিবেশ অধিদপ্তরও ২০১০ সালের আইনে মামলাটি করেছে। কিন্তু কামরুল আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। যেটি এক ধরনের অপরাধ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

নথিপত্র ঘেঁটেও পরিবেশ অধিদপ্তরে দাবির সত্যতা পাওয়া যায়। ২০১১ সালের ২২ মার্চ প্রকাশিত গেজেটে [স্মারক নম্বর: বিচার-১/৪পি-১/২০০৮-১৩৩/১(৮)] স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকার প্রতিটি জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং অধীনস্থ সব সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সব মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ (২০১০ সালের ৫৬নং আইন) ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (১৯৯৫ সালের ১নং আইন) এবং পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো আইন এবং এসব আইনের অধীনে প্রণীত বিধিতে বর্ণিত যেসব অপরাধের জন্য অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড বা কোনো কিছু বাজেয়াপ্ত বা বিনষ্ট বা বিলিবন্দেজ করার বিধান আছে, সেসব অপরাধের বিচারের জন্য স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট রূপে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা প্রদান করা হলো। আর পরিবেশ অধিদপ্তর কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত), ২০১০-এর দণ্ড ধারা ১৫ ১৫(১) টেবিলের ক্রমিক নং ১, ৮ ও ১২ ধারায় মামলাটি করেছে। এই তিনটি ধারার মধ্যে ১ ও ৮ নম্বর ধারায় এই অপরাধের ক্ষেত্রে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে একই অপরাধ পুনরায় করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া ১২ নম্বর ধারায় ২ বছর থেকে অনধিক ৫ বছর এবং ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেইক্ষেত্রে সরকারি গেজেট অনুযায়ী এই মামলার চার্জ গঠনের এখতিয়ার গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আসলে কামরুল খুবই দুষ্ট প্রকৃতির লোক। তার পেছনে অনেক লোকজন আছে। মামলা করায় তিনি আমাদের ওপর বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক চাপ দিয়েছেন। তবে আমাদের টলাতে পারেননি। এরপর জামিনে বের হয়ে এসে ভুল তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করে সে মামলায় স্থিতির আদেশ আনেন। আর এই সুযোগে ফের শুরু করেন তার দখলদারিত্ব।

মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন শাখার পরিচালক ফজলুল হককে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। এরপর খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আপনি আমাকে মামলা নম্বরসহ পুরো ডিটেইলসটা দেন, ৫ বছর ধরে মামলাটা কেন স্ট্রে হয়ে আছে, দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল হামিদকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। এরপর খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

হাইকোর্টে মামলা স্থগিত হওয়ার সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, আসলে রিট আবেদনকালে অনেক সময় মামলার সব কাগজপত্র থাকে না। তাই যা থাকে সেগুলো দেখেই আদেশ দেওয়া হয়। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আবেদন করা হলে আপিল বিভাগ ওই স্থগিতাদেশ বাতিল করে দিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে রাষ্ট্রের বিরাট স্বার্থ জড়িত। মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তাই তাদের দায়িত্ব এখানে সবচেয়ে বেশি। তাদের নিজস্ব আইনজীবী আছে, তারা বিষয়টা আদালতে তুললেই হয়।’

জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ মে টঙ্গীর গুশুলিয়া মৌজায় এম এ ওহাব অ্যান্ড সন্স (রিয়েল) লিমিটেডের অনুকূলে ছাড়পত্রে জন্য আবেদন করা হয়। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের ১৫.২১২ একর জমির অনুকূলে ২০১৫ সালের ২৮ মে অবস্থানগত ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এটি পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ২৩ মে পর্যন্ত নবায়ন করা হয়। তবে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চল কার্যালয়ে কামরুলের বিরুদ্ধে সরকারি খাসজমি ও জলাশয় ভরাটের অভিযোগ আনা হয়। এরপর বিষয়টি তদন্তে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় গাজীপুরের তৎকালীন উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আখতারুজ্জামান টুকুকে এবং সদস্য সচিব করা হয় গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিদর্শক মো. মির্জা আসাদুল কিবরিয়াকে। কমিটি সরেজমিন তদন্ত ও স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে অভিযোগের সত্যতা পায়। সরকারি জমি দখলের সত্যতা পাওয়ার পর কামরুজ্জামানকে একাধিকবার নোটিশ দিলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি তিনি। বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও সেই নোটিশের তোয়াক্কা না করে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করতে থাকেন কামরুল। এরপর গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও তৎকালীন পরিদর্শক মো. মির্জা আসাদুল কিবরিয়া ২০১৮ সালে আদালত মামলা করেন। সেখানে কামরুজ্জামান ও ছায়াকুঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদ রেজাকে আসামি করা হয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, গাজীপুরের টঙ্গীর সাতাইশ, দারাইল, গুশুলিয়া মৌজায় ছায়াকুঞ্জ-৫ ও ছায়াকুঞ্জ-৬ আবাসিক প্রকল্পের নামে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার খাসজমি এবং জলাশয় ড্রেজার মেশিন ও অসংখ্য ট্রাক লাগিয়ে ভরাট করার ফলে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে তছনছ হচ্ছে এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এজাহারে সাতাইশ, দারাইল, গুশুলিয়া মৌজায় শত শত কোটি টাকা মূল্য বলা হলেও জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক নথিতে সেখানে ৪০০ একর সরকারি খাসজমি ও জলাশয় ভরাট করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

মামলার বাদী ও বর্তমান পরিবেশ অধিদপ্তরের (সদর দপ্তর) সহকারী পরিচালক মির্জা আসাদুল কিবরিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘উনার (কামরুজ্জামান) বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পরে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর তাকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে নিষেধ করলেও তিনি ফেরেননি। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলা করা হয়। এর কয়েকদিন পরই গাজীপুর থেকে বদলি হয়ে যাই। আমার জায়গায় সংশ্লিষ্ট যারা এসছেন তাদের তত্ত্বাবধান করার কথা।’

সরেজমিন আরও জানা গেছে, এই কামরুল এক সময় জমির দালালি করতেন। দালালির সুবাধে স্থানীয় ভূমি অফিসের লোকজনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে খাসজমি ও মালিকানা নিয়ে সমস্যা সংক্রান্ত জমির তালিকা তৈরি করেন। আর মালিক না থাকলে কাউকে মালিক বানিয়ে নিজের নামে তা দলিল করে বিক্রি করে দেন চড়া দামে। কোথাও যৎসামান্য কিনে আশপাশের জমিতে বালু ফেলে ভরাট করেন। ফলে কম দামে তার কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন প্রকৃত মালিকরা। এমনকি স্থানীয় গুটিয়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠ দখল করে নিজের মায়ের নামে তৈরি করেছেন ‘লালমননেছা জামিয়া ইসলামিয়া গুটিয়া মাদ্রাসা’। ঈদের সময় মাঠে নামাজ পড়তে না পেরে ক্ষুব্ধ এলাকার লোকজন। এ ছাড়া স্থানীয় গুটিয়া খালের পূর্ব পাশে গজারি গাছ পুঁতে মাটি ফেলে ভরাট করেছেন কয়েক কিলোমিটার এলাকা। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক কালবেলায় এর আগে ‘জমি-খাল গিলে খান রহস্যময় কামরুল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি বিল, শত শত বিঘা কৃষিজমি বালু ফেলে ভরাট করে তা বিভিন্ন কোম্পানির কছে ভুয়া দলিলপত্র বানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন কামরুল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান কামরুলকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

এভাবে খাল, জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এটি তো গুরুতর অভিযোগ। হাইকোর্টে মামলা স্থগিত হলেও কোর্টকে যদি মামলার গুরুত্ব বোঝানো যায়, তাহলে তো কোর্ট সেই স্থগিতাদেশ বাতিল করে দেবেন। তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর সেটি কেন করছে না। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর তো একটা পার্ট। সেখানকার জেলা প্রশাসকই বা কী করেন? তারও তো দায়িত্ব রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছে একটা অভিযোগ এসছিল যে, একটা খাল ভরাট করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমাদের কর্মকর্তা গিয়ে সেই খাল থেকে উনাকে দিয়ে মাটি উঠিয়েছেন। তবে ৪০০ একরের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের কাছে নথি থাকলে দেন। ওই জমি যদি সরকারি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত হয়, তাহলে সেটা উদ্ধার করে সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

 

আরো জানতে………

জমি-খাল গিলে খান রহস্যময় কোম্পানি কামরুল!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button