কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ৩৫ জন দগ্ধ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৩৫ জন দগ্ধ হয়েছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) পৌনে আটটার দিকে দগ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়।
সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কালিয়াকৈর থেকে নারী-শিশুসহ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে জরুরি বিভাগে ৩৫ জন এসেছে। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে। তাদের কার শরীরের কত শতাংশ দগ্ধ হয়েছে সে বিষয়টি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
জরুরি বিভাগ থেকে দগ্ধদের মধ্যে শিশুসহ বেশ কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলো— নাদিম (২২), নিরব (১০), শুপ্রিয়া (০৯), মিরাজ (১৩), তারেক রহমান (১৭), মান্নাত (১৭), সোলায়মান (৯), লালন (২৩), নাইম (৮), শিল্পি (৩০), ইয়াসিন আরাফাত (২১), সুমন (২৬), মহিদুল (২৭), রাব্বি (১৩), উর্মিতা (২২), সাদিয়া খাতুন (১৮), জহিরুল (৩২), আরিফ (৪০), রত্না বেগম (৪০), তায়েবা (৩), মনসুর আলী (৩০), নূর নবী (৩), রহিমা (৩), কবির (৩০), কুদ্দুস (৪৫), তৌহিদ (৭), সোলায়মান (৪০), মশিউর (২২) ও লাদেন (২২)।
দগ্ধদের দেখতে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৭ শিশুসহ দগ্ধ ৩৫ জনের কেউ শঙ্কামুক্ত না। এদের মধ্যে ৮ জনের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, তেলিরচালা টপস্টার কারখানার পাশে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী জমি ভাড়া নিয়ে কলোনি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। ওই কলোনির একটি বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে পাশের একটি দোকান থেকে শফিকুল ইসলাম নিজেই গ্যাস সিলিন্ডার কিনে আনেন। সেই সিলিন্ডারটি লাগানের সময় সিলিন্ডারের চাবি খুলে গিয়ে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। তখন ওই ব্যক্তি গ্যাস সিলিন্ডারটি ছুড়ে মারেন। সে সময় গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লেগে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আগুন আশপাশের নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ৩৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে দগ্ধদের উদ্ধার করে কোনাবাড়ি এলাকার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান।
দগ্ধ একজন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তেলিরচালা় এলাকায় একটি বাসায় গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে শো শো শব্দে গ্যাস বের হচ্ছিল। এরপর বাড়ির লোকজন সেই সিলিন্ডারটি গলির মধ্যে ফেলে যায়। ইফতারের আগে ওই গলিতে যখন অনেক লোকজন চলাচল করছিল ঠিক সেই সময় সেটিতে বিস্ফোরণ ঘটে ও আগুন লাগে। সেই আগুনে গলিতে অবস্থানকারী ও চলাচলরত লোকজন দগ্ধ হয়। নিজে তখন ওই গলির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
চিকিৎসাধীন আরিফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, একটি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হওয়ার শব্দ শুনে পাশের গলিতে রাখার পর পরই আগুন ধরে যায়। ফলে ওই গলি দিয়ে যাতায়াত করা প্রায় সবাই কম-বেশি দগ্ধ হয়।
বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। সিলিন্ডার ত্রুটি থাকার কারণে গ্যাস বের হতে থাকে। হঠাৎ পাশের চুলা থেকে সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায়। এসময় আশপাশে থাকা অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। পরে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আল আরেফিন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সংবাদ পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের টিম যায়। সেখানে গিয়ে দগ্ধ কাউকে পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই দগ্ধদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।