বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিতে বাধা নেই : হাইকোর্ট

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে যে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছিল, সেটি স্থগিত করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এর ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি করতে আর কোন বাধা থাকছে না।
সোমবার (০১ এপ্রিল) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বুয়েট শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রহিম রাব্বি হাইকোর্টে রিট করলে দুপুরে শুনানি শেষে এই আদেশ দেয়া হয়।
রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
রিটকারীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘’সমাবেশ করা, রাজনৈতিক দল করা, বাকস্বাধীনতার অধিকার আমাদের সংবিধানে দেয়া আছে। সেই সঙ্গে অর্ডিন্যান্সে বলা আছে, যদি প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ও প্রশাসন কিছু ব্যবস্থা নিতে পারবে। যেমন মিছিল-মিটিং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু সংগঠন বন্ধ করার কোন ক্ষমতা বুয়েটের নেই, সংবিধানেও নেই।‘’
‘’আমরা আজকে রিট করে হিয়ারিং করেছি। মাননীয় আদালত এটার ওপর রুল দিয়েছেন। মাননীয় আদালত বুয়েটের সেই ইমার্জেন্সি সার্কুলার স্থগিত করে দিয়েছেন। বুয়েটে এখন থেকে ছাত্ররাজনীতি করার আর কোন বাধা থাকলো না।‘’
ওই রিটে শিক্ষা সচিব, বুয়েটের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছিল।
এই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘’কোর্ট যা বলে, সেটা আমাদের মানতে হবে। কোর্টের আদেশ আমাদের শিরোধার্য। তবে সেটা করতে গেলে আমাদের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।‘’
২০১৯ সালের সাতই অক্টোবর বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেই হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সেই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
কিন্তু গত ২৮শে মার্চ দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কয়েকজন নেতা বুয়েটে প্রবেশ করে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকেই তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে আবার রাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করে।
শনিবার শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা শপথ করছি সকল রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না।”
“ক্যাম্পাসের রাজনীতি মুক্ত থাকা, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে আমরা সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী অনতিবিলম্বে আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যাবো”, সাংবাদিকদের বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর সাথে জড়িত ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বিসহ অন্যদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা সহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই শিক্ষার্থীর হলের সিটও বাতিল করে দেয়া হয়।
সেই শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিই সোমবার সকালে বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন।
এর আগে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, দাবি আদায়ে প্রয়োজনে তারা আদালত পর্যন্ত যাবেন।
“আদালত এবং রাজপথ দুই জায়গাতেই ছাত্রলীগ একই সাথে লড়বে। নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আবারও শুরু করবে”, রোববার বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. হোসেন।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছিলেন, ‘আমি রাজনীতি করি, সে জন্য বুয়েটে আমি যেতে পারব না? এটা কোন ধরনের আইন?…ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে একটা অপরাজনীতি-জঙ্গিবাদের কারখানায় রূপান্তরিত করা হবে, পরিণত করা হবে—এটা যাতে না হয়। আমরা তদন্ত করে দেখছি, এ ধরনের কিছু পাওয়া গেলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে।‘’
অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে শনিবার মন্তব্য করেছেন, “পেছন থেকে কেউ ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, পেছন থেকে জঙ্গিবাদী মানসিকতার-উগ্রবাদী মানসিকতার কেউ কি ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ এই আলোচনাটা বারবার আসছে।”
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বারবার বলেছেন তাদের সাথে কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা নেই। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা ক্লাস এবং পরীক্ষাও বর্জন করে যাচ্ছেন।