বিমান টিকেটের আকাশছোঁয়া দাম, যাত্রীদের দুর্ভোগ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঈদ-উল-ফিতরের আগে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ফ্লাইটের বিমান ভাড়া বেড়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।

ঈদের পর এক সপ্তাহের জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে চেয়েছিলেন সদ্য বিবাহিত দম্পতি আজরা মরিন ও স্নায়েল খান।

ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের সরাসরি ফ্লাইট থাকা সত্ত্বেও কম খরচে যেতে এই দম্পতি কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা বেছে নিয়েছেন।

তারা জানান, প্রায় সমান বিমান দূরত্ব থাকলেও ঢাকা থেকে টিকেটের দাম কলকাতার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। এই দম্পতি সড়কপথে কলকাতা যাওয়ার ও সেখান থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

একই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি বিদেশী এনজিওতে কর্মরত সিনিয়র কর্মকর্তা সুকান্ত ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী। টাকা বাঁচাতে তারা কলকাতা হয়ে ব্যাংকক যাবেন।

তারা বলছেন, কলকাতা থেকে ব্যাংককের ভাড়া ঢাকার তুলনায় প্রায় তিনগুণ কম।

বেশ কয়েকটি অনলাইন টিকেট বুকিং ওয়েবসাইট ঘুরে ও টিকেট সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা মিলেছে।

এতে দেখা যায়, কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুরের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে ১৫,০০০-১৬,০০০ টাকার মধ্যে। ঢাকা থেকে একই গন্তব্যে যেতে খরচ হয়েছে ২৮,০০০-৩০,০০০ টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে ব্যাংকক যেতে একজন বিমানযাত্রীকে খরচ করতে হয় ৩০,০০০ টাকা। যদিও ভ্রমণের সময় একই, তবুও কলকাতা থেকে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে ১২,০০০ টাকায়।

অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকেটেরও দাম বেড়েছে

অভ্যন্তরীণ রুটেও টিকেটের দাম বৃদ্ধির একই অবস্থা দেখা গেছে।

ঈদের সময়, মধ্যম আয়ের পরিবারের মানুষেরা দ্রুত ও ঝামেলা ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে আকাশপথে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হন। তবে এই সময়ের মধ্যে টিকেটের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের ঈদযাত্রা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

চট্টগ্রাম যেতে ইচ্ছুক মাহফুজ হোসেন নামে এক যাত্রী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “এক সপ্তাহ আগে তিনি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে বিজনেস ক্লাসের টিকিট খুঁজছিলেন, দেখেন দাম ৭,১৫০ টাকা।”

তবে এখন দাম বেড়েছে আট হাজার টাকা।

একইভাবে ইকোনমি ক্লাসের টিকেটের দাম ৪,৯৯৯ টাকা থাকলেও সোমবার তা বেড়ে হয়েছে ৫,০০০-৬,০০০ টাকায়।

যা বলছেন কর্তৃপক্ষ

যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ঈদের সময় অনেকেই বিমান ভ্রমণ পছন্দ করবেন বলে জানা থাকায় বিমান কর্তৃপক্ষ দাম বাড়িয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

তবে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সব সময় বাসের মতো এয়ার টিকেট পাওয়া যায় না।

যারা বিমান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে তারা এক মাস আগে তাদের টিকেট বুকিং নিশ্চিত করেছেন, কারণ টিকেট বিক্রি হয়ে যায় ও উৎসবের সময় সাধারণত দাম বেড়ে যায়।

টিকেটের মূল্য পরিবর্তনের অভিযোগের বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বুকিংয়ের সময়সীমা পরিবর্তন করা হলে, মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করা হবে।”

তিনি বলেন, “প্রতিটি এয়ারলাইন তার ব্যবসায়িক নীতি অনুযায়ী কাজ করে, যা অন্যান্য এয়ারলাইনগুলোর থেকে আলাদা হতে পারে, যার ফলে টিকেটের দাম প্রভাবিত হয়।”

টিকেটের উচ্চ মূল্যের বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (এটাবি) ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) নেতারা বলেন, “ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলো দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বজায় রেখেছে। বিশেষ অনুষ্ঠানে বা উৎসবে টিকেটের দাম বাড়ায় সিন্ডিকেট।”

টোয়াব সেক্রেটারি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন প্রশ্ন করেন, “ভারত যদি কম দামে টিকেট বিক্রি করে লাভ করতে পারে, আমরা কেন পারি না?”

সিন্ডিকেটের কারসাজি করে টিকেটের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে, তিনি পরামর্শ দেন, “এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ লাভের জন্য তাদের ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে পারে।”

এটাবি সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিমান অপারেটররা টিকেটের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ডলারের সঙ্কট ও উচ্চ জ্বালানি খরচকে দায়ী করেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা উৎসব ও উদযাপনের ওপর নজর দিয়ে এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে লাভের একটি প্রবণতা লক্ষ্য করেছি।”

তিনি পরামর্শ দেন, “বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন স্কেলে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা এবং বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা।”

 

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button