‘জনগণের দুঃখ’ পূবাইল-জয়দেবপুর বিপজ্জনক সড়ক!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পূবাইল হয়ে গাজীপুর জেলা শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত প্রায় দশ কিলোমিটারের পূবাইল-জয়দেবপুর সড়কের বিভিন্ন অংশে খানা-খন্দে বেহাল অবস্থা থাকার ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল কারী জনসাধারণকে।

টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের পূবাইল কলেজ গেইট থেকে ভাদুন হয়ে গুরুত্বপূর্ন এ সড়কটি জয়দেবপুর বা জেলা শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে।

সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটির পিচ-ঢালাই উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব গর্তে স্তূপাকারে ধুলাবালি জমে থাকায় যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ধুলাবালি জমে থাকা এ সড়কে নিত্য ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছেন। সামান্য বাতাসে পুরো শরীর ধুলাময় হয়ে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে কাদা পানির দৌরাত্ম্যে এ সড়কে চলাই দায়। এ সড়ক বাদে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার মানুষকে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে জনদুর্ভোগ এখন চরমে পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে ঢেউয়ের আকার ধারণ করায় যান চলাচলও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।

এরপরও ঝুঁকি নিয়েই এ সড়কটি ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করতে হচ্ছে কালীগঞ্জ ও পূবাইল এলাকার বেশিরভাগ জনসাধারণ সহ সকল প্রকার সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কালীগঞ্জ উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য যেতে হয় গাজীপর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে। কালীগঞ্জ থানা থেকে আদালত বা কারাগারে আসামি আনা-নেওয়ার জন্যও এই সড়ক ব্যবহার করে পুলিশ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সকল সরকারি বেসরকারি অফিস ছাড়াও জেলা শহরে অবস্থিত স্কুল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তথা সকল শ্রেণী পেশার মানুষের যাতায়াত এই সড়কটি দিয়ে।

এ সড়কে চলাচল কারী অনেকেই এ সড়কটিকে ‘জনগণের দুঃখ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এই সড়কের পাশেই রয়েছে ১০-১৫টি শুটিং স্পট ও রিসোর্টস, এছাড়াও গড়ে উঠছে বিভিন্ন কোম্পানির ফ্যাক্টরি।

পূবাইল আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেন চৌধুরী বলেন, পূবাইল কলেজ ও ভাদুন স্কুলের কিছু শিক্ষক ও হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে আসে।কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে তখনই যখন দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটবে। সদর হাসপাতালে প্রসূতি মায়েরা এ রাস্তা ব্যবহার করতে পারছেনা। তাছাড়া জয়দেবপুর যেতে তিনটি ঝুঁকি পূর্ন ব্রীজ থাকায় দুঃসংবাদ আসা সময়ের ব্যাপার।

এ সড়কে চলাচলরত লেগুনার চালক নিতাই চন্দ্র বলেন, রাস্তাটি মেরামত না করায় প্রায়ই গাড়ি উল্টে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা ঝাঁকুনিতে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পরে।

আবদুল খলিল নামে এক যাত্রী বলেন, গাজীপুর সিটির বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নিকট আমাদের প্রত্যাশাটা অনেক বেশী, কিন্ত বছর পেরলেও আশা পূরণের সম্ভবনা অত্যন্ত ক্ষীণ দেখছি।

এ সড়কে চলাচলকারী নিয়মিত যাত্রী পূবাইল ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জাবেদ সারোয়ার বলেন, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিস করতে হয়। রাস্তাটি স্থায়ী ভাবে মেরামত করলে জেলা শহরে যাওয়া যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে।

মহানগরের ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোমেন মিয়া বলেন, বালুবাহী ড্রাম ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় রাস্তা বার বার নষ্ট হয়ে যায়। আমার জানা মতে সড়কটি মেরামতের জন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে টেন্ডার আহ্বান হওয়ার কথা খুব শীঘ্রই।

পূবাইল বাজারের কাদির মোল্লা বলেন, কেইস-মামলা না থাকলে গাজীপুরে যাইনা। অদ্ভুত রাস্তার কথা ভেবে সাধারণত গাজীপুর যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী নূরুল আমিন ভূঁইয়া জানান, ওই সড়ক মেরামতের জন্য মঙ্গলবার টেন্ডার ড্রপ করা হবে।

এছাড়াও ৩৮২০কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কটি ৬০ফুট প্রস্থ করার জন্য একনেকে পাঠানো হয়েছে। ভাদুনের ঝুঁকিপূর্ন একটি ব্রীজ রয়েছে ওই ব্রীজের কাজও খুব দ্রুতই শুরু হবে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button