খুলনায় সংঘর্ষে কনস্টেবল নিহত

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : খুলনা নগরীর বিভিন্ন স্থানে শুক্রবার পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের কনস্টেবল সুমন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হন অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে ১৯ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মিছিলকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। তবে ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

শিক্ষার্থীরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তারা বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে শিববাড়ী হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আসেন। বেলা পৌনে ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। এতে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া দিলে পুলিশ জিরো পয়েন্টের দিকে চলে যায়। এখানে পুলিশ ও ছাত্র-জনতার মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ জিরো পয়েন্ট থেকে আরও পিছু হটে খুলনা-রূপসা বাইপাস রোডে হরিণটানা থানার গেটে অবস্থান নেয়। বিক্ষুব্ধরা সেখানেও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে গল্লামারী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত গল্লামারী থেকে সোনাডাঙ্গা বাইপাস সিএসএস স্কুল পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর জখম সুমনসহ আহত আরও তিন পুলিশ সদস্যকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এখানে চিকিৎসকরা কনস্টেবল সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে আনার পথে তার মৃত্যু হয়। খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।

আহত ১৯ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সরকারি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান নাবিল, চাকরিজীবী সৌরভ আহমেদসহ সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরতরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিরাজুল ইসলাম (৬০), শাহরিয়ার নীরব (২৪), আবির (২৪), মিজান (৪৮), ফাইয়াস (২৩), রবিনা (৩২), নাবিল (২৪), মিজান (৩২), সৌরভ (২৩), শেখ তানিক (২২), মিতু (২১), তানিয়া (১৯), রাবেয়া সুলতানাসহ (২৩) ১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানান, আহত অনেকের দেহে গুলি লেগেছে। এদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কপালে রাবার বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। জরুরিভাবে অপারেশনের মাধ্যমে তার বুলেট বের করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কমপক্ষে ৭-৮ জনের শরীরে গুলি রয়েছে। বাকিরা টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।

এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। কিন্তু তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এতে একজন কনস্টেবল নিহত ও আরও ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অহেতুক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।

Related Articles

Back to top button