এটিএম জালিয়াতি : ইন্টারপোলের সহায়তায় অপরাধীদের খুঁজছে সিআইডি
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের (ডিবিবিএল) এটিএম বুথ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব অপরাধীকে খুঁজে বের করতে ইন্টারপোলের বিশেষায়িত কর্মসূচি ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’-এর সহযোগিতা নিচ্ছে সংস্থাটি। পাশাপাশি এ মামলা তদন্তে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে ইউক্রেনের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। ১৮-২০ জুন চীনে অনুষ্ঠিত ইন্টারপোলের এক সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত হয়।
ইন্টারপোলের অ্যান্টি ট্রান্সন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ওয়ার্কিং গ্রুপের সপ্তম সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইন্টারপোল ও চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়। চীনের চংকিং শহরে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
সম্মেলন থেকে ফিরে তিনি জানান, চলতি মাসের প্রথম দিকে দেশে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির বিষয়টি সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। ওই সম্মেলনে অংশ নেয়া অন্যান্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ডিবিবিএলের এটিএম বুথ হ্যাকিংয়ের মামলটি তদন্তে অপারেশন ফার্স্ট লাইট আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। বিষয়টি সমন্বয় করছে ইন্টারপোল। ইউক্রেনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মামলা তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এরই মধ্যে ইউক্রেন এনসিবি ও বাংলাদেশ এনসিবির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
রাশিয়াভিত্তিক ফুটবল খেলোয়াড়দের সম্পৃক্ততায় জমে ওঠা বাজি ও জুয়ার অপরাধ দমনে ২০১৫ সালে অপারেশন ফার্স্ট লাইট নামের বিশেষায়িত এ কর্মসূচি চালু করে ইন্টারপোল। ওই বছরই ৩০টি ভুয়া কলসেন্টার শনাক্ত করে ইন্দোনেশিয়ায় ২৪৫ জন চীনা ও তাইওয়ানের নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। কম্বোডিয়ায় ১৬৮ জন চীনা নাগরিককে গ্রেফতার করে আলোচনায় আসে অপারেশন ফার্স্ট লাইট। এ কর্মসূচির সহযোগিতায় এটিএম জালিয়াত চক্রের আন্তর্জাতিক অপরাধীদের খুঁজে পেতে কাজ শুরু করেছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে চলতি মাসের শুরুর দিকে ডিবিবিএলের বুথ থেকে অর্থ তুলে নেয় ইউক্রেনভিত্তিক প্রতারক চক্রের সদস্যরা। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে দেনিস ভিতোমস্কি নামের একজনকে এবং তার দেয়া তথ্যে রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে নাজারি ভজনোক, ভালেনতিন সোকোলোভস্কি, সের্গেই উইক্রাইনেৎস, আলেগ শেভচুক ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি নামের আরো পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক। তারা মূলত উত্তর কোরিয়াভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপ হিডেন কোবরার হয়ে কাজ করে। জালিয়াতির এ ঘটনায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে। পাশাপাশি সিআইডির পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে, যেটি তদন্ত শুরু করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।
সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তর কোরিয়াভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপই মূলত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এটিএম বুথের অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনাটি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিবিবিএলে এটিএম বুথ হ্যাকিংয়ে যুক্ত করা হয় ইউক্রেনের নাগরিকদের। তাদের কাজ ছিল নির্দিষ্ট কিছু বুথ টার্গেট করা এবং সেসব বুথের তথ্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপকে জানানো। এ প্রক্রিয়ায়ই তারা খিলগাঁওয়ের দুটি, কাকরাইলের একটি, নিকুঞ্জের দুটি, ভিআইপি রোডের একটি, হোটেল র্যাডিসনের একটি এবং সর্বশেষ বাড্ডা এলাকার দুটি বুথ থেকে ১৬ লাখ টাকা তুলে নেয়।
সূত্র: বণিক বার্তা