গাজীপুরে ‘প্রি-পেইড মিটার’ ভোগান্তির শেষ নেই, থামছে না অভিযোগ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার বা অপচয় রোধে দুই বছর আগে গাজীপুরে চালু হয় পল্লী বিদ্যুতের স্বয়ংক্রিয় বিলিং পদ্ধতি প্রি-পেমেন্ট বা প্রি-পেইড মিটার। কিন্তু এই মিটার নিয়ে গ্রাহকদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গ্রাহকেরা বলছেন, এই মিটারে বিদ্যুতের খরচ বেশি। মিটারভাড়া বেড়েছে চার গুণ। হুটহাট বিদ্যুৎ চলে যায়। পর্যাপ্ত ভেন্ডিং স্টেশন নেই। এসব কারণে তাঁদের ভোগান্তির শেষ নেই।

১৩ জুলাই প্রথম আলো- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘গাজীপুরে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে অভিযোগ থামছেই না’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের মার্চে শুরু হওয়া কার্যক্রমের এখন চলছে দ্বিতীয় ধাপের কাজ। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দুই লাখ মিটার স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার স্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে মিটারগুলো স্থাপনের পর থেকেই মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান, পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাওসহ নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে গাজীপুরবাসী। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ১৪ মে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর সামনে মানববন্ধন করেন কয়েক শ গ্রাহক। এ বছর ১১ জুন ১৫ দিনের মধ্যে প্রি-পেইড মিটার অপসারণসহ চার দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় গাজীপুর নাগরিক ফোরাম। একই দাবিতে ১৯ জুন মানববন্ধন করেন শ্রীপুর ও কালিয়াকৈরের গ্রাহকেরা। এর মধ্যে কালিয়াকৈরে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করা হয়। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সুরাহার জন্য পল্লী বিদ্যুতের জিএমকে বলা হয়েছে। তা ছাড়া জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জয়দেবপুর উত্তর ছায়াবীথি এলাকার মো. রাকিবুল আলম। আগে পোস্ট-পেইড মিটারে একটি টিভি, একটি ফ্রিজ, একটি এসি, চারটি সিলিং ফ্যান ও ছয়টি বাতির জন্য বিদ্যুৎ বিল দিতেন গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রি-পেইড মিটার লাগানোর পর সেই বিল বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১০০ টাকায়।

নগরের হাজিপাড়ার গৃহিণী সুমা আক্তার এক কক্ষের বাসায় একটি করে ফ্যান, টিভি, ফ্রিজ ও তিনটি বাতির জন্য বিল দিতেন গড়ে ৬০০ টাকা। কিন্তু প্রি-পেইড মিটারে এক মাসেই রিচার্জ করতে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

একই কারণে বাড়ির ভাড়াটে চলে যাচ্ছে বলে জানান জয়দেবপুরের সাহাপাড়া এলাকার স্বপন কুমার দাস। তাঁর ভাষ্য, ‘আগে এক মিটারে দুই ভাড়াটের বিল আসত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু প্রি-পেইড মিটার লাগানোর (এপ্রিল) পর এক মাসেই একেকজনকে রিচার্জ করতে হয়েছে ১ হাজার টাকার বেশি।’

অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে ১০ জন গ্রাহকের প্রি-পেইড ও পোস্ট পেইড মিটারের বিদ্যুৎ বিল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রি-পেইড মিটারের বিদ্যুৎ খরচ তার আগের মাসের পোস্ট-পেইড মিটারের চেয়ে বেশি। অথচ ইলেকট্রিক সরঞ্জামাদি বা বিদ্যুৎ ব্যবহারেরও তেমন কোনো পরিবর্তন ছিল না।

দেখা যায়, রাকিবুল আলম প্রি-পেইড মিটারে সংযোগ পান ২৩ এপ্রিল। এরপর ২৫ এপ্রিল রিচার্জ করেন ১ হাজার টাকা। ৫ মে রিচার্জ করেন ১ হাজার ১০০ টাকা। ১৪ মে রিচার্জ করেন আরও ১ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২৬ মে রিচার্জ করেন আরও ১ হাজার টাকা। সে হিসাবে এক মাসে (২৫ এপ্রিল-২৫ মে) তাঁর বিদ্যুৎ খরচ ৩ হাজার ১০০ টাকা। অথচ পোস্ট–পেইড মিটারে আগের মাসের (এপ্রিল) বিল ছিল ৫৭৫ টাকা, মার্চে ৮৯৬ টাকা।

এ ছাড়া মিটার ভাড়া ১০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা করা হয়েছে। কার্ড রিচার্জের জন্য পর্যাপ্ত ভেন্ডিং স্টেশন নেই। ইমারজেন্সি ব্যালান্স না পাওয়া, হঠাৎ মিটার বন্ধ হওয়া, হুটহাট বিদ্যুৎ চলে যাওয়া নিয়েও আছে অভিযোগ।

গাজীপুর নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিনের মতে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের কাউকে না জানিয়েই প্রি–পেইড মিটার জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সুবিধার চেয়ে ভোগান্তি বেশি।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর কার্যালয় থেকে জানানো হয় ভিন্ন কথা। তাঁদের দাবি, গ্রাহকেরা হুজুগে এসব অভিযোগ করছেন। নতুন পদ্ধতি চালু হলে তার জন্য সময় দরকার। কিন্তু গ্রাহকেরা সেই সময় দিচ্ছেন না।

সমিতির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক যুবরাজ চন্দ্র পাল বলেন, বর্তমান প্রি-পেইড মিটারের দাম বেশি, তাই সরকারিভাবে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি বিলের বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খরচ বাড়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button