গুজব ঠেকাতে সোশাল মিডিয়ায় পুলিশের চোখ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে গত চার দিনে অন্তত সাতজনের মৃত্যুর পর গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে বলে যে গুজব ছড়িয়েছে তাকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। এর আগে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষও একটি নোটিস দিয়েছিলো। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে গেছে ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনা।

দুটি ঘটনা সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে মানুষজনকে। তার একটি হল ঢাকার বাড্ডায় এক নারী তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন। সেই ভিডিও এখন ফেসবুকে ভাইরাল। নারায়ণগঞ্জেও ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বাক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তির।

যেভাবে হচ্ছে এই অভিযান
পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার বলছেন, গুজবের জেরে গণপিটুনি ঠেকাতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটসহ একাধিক ইউনিট নিয়ে দল গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলছেন, “কিছু গ্রুপ আছে যেগুলো দেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেসব গ্রুপ থেকে প্রথমে এগুলো দেয়া হচ্ছে, যেটা আপনারা জানেন আগেও করা হয়েছে। এসব গ্রুপে অনেক লাইক দেয়া আছে। যারা খুবই অ্যামেচার ইউজার তারা ওখান থেকে এসব শেয়ার দিচ্ছে।”

তবে এই গ্রুপের নাম বলতে চাননি তিনি ।

মি. সরকার বলছেন, ইতিমধ্যেই তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছেন।দেশে গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে গত চার দিনে অন্তত সাতজনের মৃত্যুর পর গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে বলে যে গুজব ছড়িয়েছে তাকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। এর আগে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষও একটি নোটিস দিয়েছিলো। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে গেছে ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনা।

দুটি ঘটনা সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে মানুষজনকে। তার একটি হল ঢাকার বাড্ডায় এক নারী তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন। সেই ভিডিও এখন ফেসবুকে ভাইরাল। নারায়ণগঞ্জেও ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বাক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তির।

গুজব নিয়ন্ত্রণ কতটা মুশকিল?
সোশাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার সুমন আহমেদ সাবির বলছেন, “কোন পোস্ট নিয়ে যদি কেউ ফেসবুকে রিপোর্ট করেন তাহলে সাধারণত সেটি সরিয়ে নেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের সাথে ইদানীং ভালো যোগাযোগ আছে ফেসবুক বা গুগলের। তারা অনুরোধ করলে বেশিরভাগ সময় একটি দুটি কনটেন্ট সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু গুজব আকারে যখন কিছু ভাইরাল হতে থাকে তখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন।”

নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দুটো মসজিদে হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেই ঘটনা ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করেছিলো হামলাকারী। সেই ভিডিও কিন্তু নামে বেনামে খুব দ্রুততার সাথে ফেসবুকে এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে সেগুলো সরাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। আপনি খুঁজলে দেখবেন এখনও ওই ভিডিও রয়ে গেছে।”

তিনি বলছেন, এরকম কনটেন্ট যদি হাজার হাজার হয়ে যায় তখন তা সরাতে হিমশিম খেতে হয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে। তার মতে, বিষয়টি বাংলাদেশের মতো দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আরও কঠিন।

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলছেন, “যেমন হোয়াটসঅ্যাপে গুজব ছড়িয়ে ভারতে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটছিলো। এত বড় একটি দেশে এই অ্যাপের এতো বড় ব্যবসা, ভারত সরকারের চাপ কিন্তু তারা মানতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো দেশের সরকারের অভিযোগ তারা ওই মাত্রায় গুরুত্ব দিচ্ছে না।”

ভারতে গত চার-পাঁচ বছরে গণধোলাইয়ে একশোরও বেশি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর বেশির ভাগই ঘটেছে গরু রক্ষার ইস্যুকে কেন্দ্র করে।

অনেক ঘটনায় হোয়াটসঅ্যাপে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এক পর্যায়ে অ্যাপ কোম্পানিটি ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নিয়ম বদলাতে বাধ্য হয়। তার একটি ছিল একজন ব্যবহারকারী একটি মেসেজ পাঁচবারের বেশি ফরোয়ার্ড করতে পারবেন না। একটি গ্রুপে আড়াইশোর বেশি সদস্য থাকতে পারবে না।

মি. আহমেদ বলছেন, ক্ষমতা ও ব্যবসা- দুই জায়গাতেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

যেভাবে গুজব ছড়ায়
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ঘটনা এই প্রথম নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খন্দকার ফারজানা রহমান বলছেন, “সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুজব ছড়ানোর জন্য খুব বিপজ্জনক জায়গা। কারণ এখানে তিন ধরনের ব্যবহারকারী থাকে। একদল গুজব ছড়ায়, আরেকটি গ্রুপ এসব পোস্ট ছড়ালেও একটি সময় পর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, আরেকটি গ্রুপ এগুলো দেখে কিন্তু কিছু করে না। প্রথম দুটি গ্রুপই বেশি বিপজ্জনক।”

ফেসবুকের কিছু পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগে ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ-পল্লীতে হামলা হয়েছিলো। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনাটি গড়িয়েছিল সাম্প্রদায়িক হামলা, পুলিশের গুলি ও একজনের মৃত্যু পর্যন্ত।

 

সূত্র: বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button